জয়েন গ্রুপ

বাংলা সিরিয়াল

এই মুহূর্তে

“আমার সমসাময়িক কেউ শরীরের যত্ন না নিলে, তাঁরা বাবা-দাদুর চরিত্র করছেন…আমি যত্ন নিলে কেন অন্য কিছু করতে পারব না?”— টলিউডে বয়স নির্ভর বৈষম্য নিয়ে সরব অভিনেতা সাগ্নিক! ইন্ডাস্ট্রির ‘লুকস ফার্স্ট’ মানসিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুললেন অভিনেতা!

টলিউডে খলনায়ক হিসেবে আজ যাঁকে আমরা চিনি, সেই অভিনেতা ‘সাগ্নিক চট্টোপাধ্যায়’-এর (Sagnik Chatterjee) অভিনয় যাত্রাটা আসলে ছিল বহু সমস্যায় ভরা। ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে হয়ে বাবার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসার হাল ধরার কথা ছিল তাঁর, কিন্তু ছোট থেকেই নিজের ভিতরে অন্য টান অনুভব করতেন তিনি, সেটা ছিল অভিনয়ের টান। পছন্দ ছিল হিরো হওয়া, প্রেরণা ছিলেন মিঠুন চক্রবর্তী। তবে সেই স্বপ্নের পথটা কখনই ছিল না সোজা, বরং শুরুটা হয়েছিল প্রচণ্ড অনিশ্চয়তা, প্রত্যাখ্যান আর ভুল বোঝাবুঝি দিয়ে।

একটা সময় ছিল, যখন স্টুডিও পাড়ায় প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থাকতেন সাগ্নিক, একটাই আশা যে কেউ একটা সুযোগ দেবেন। একদিন সত্যিই ডাক পড়ে, কিন্তু যেভাবে চরিত্র মূল্যায়ন হয়, তাতে স্বপ্নটা কিছুটা ধাক্কা খায়। বলা হয়, হিরো হওয়ার জন্য তাঁর গায়ের রং, শরীরের গঠন, এমনকি সাজগোজও অনুপযুক্ত। কানে দুল পরা, স্কিনফিট জামা– এসব তখন ‘হিরোইজম’-এর সংজ্ঞার বাইরে ছিল। তখনকার মতো হিরো হবার স্বপ্ন ছেড়ে দিলেও, থেমে যাননি তিনি।

বরং বুঝে নেন, অভিনয়টা শুধুই সৌন্দর্যের খেলা নয়, সেটা চরিত্রে ঢুকে যাওয়ার দক্ষতা, আর সেই জায়গায় তিনি ধীরে ধীরে তৈরি করতে থাকেন নিজের পরিচয়। আজকের দিনে দাঁড়িয়েও সাগ্নিক মনে করেন, ইন্ডাস্ট্রিতে রয়ে গেছে এক ধরনের অদৃশ্য পক্ষপাত। শুধু অভিনয় জানলে হবে না, দেখতে হবে আপনার বয়স কত, শরীর কেমন, কতদিন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আজকাল তো কাজের জন্যও নথিপত্র দিতে হয়— প্যান কার্ড, আধার, যেখানে স্পষ্ট লেখা থাকে বয়স।

ফলে যতই আপনি শরীরচর্চা করুন বা নিজেকে তরতাজা রাখার চেষ্টা করুন, কেউ আপনাকে দেখতে পাবে না ততদিন, যতদিন না আপনি ‘ঠিক বয়সের’ মতো দেখাচ্ছেন। এই চেহারা আর বয়স নির্ভর কাস্টিং-এর প্রথাটাকে প্রশ্ন করেন তিনি,”আমার সমসাময়িক কেউ শরীরের যত্ন না নিলে, তাঁরা বাবা-দাদুর চরিত্র করছেন ঠিক আছে, তাহলে আমি যত্ন নিলে কেন অন্য কিছু করতে পারব না?” এই প্রশ্নগুলো সাগ্নিক তুলছেন এমন এক ইন্ডাস্ট্রির দিকে, যেটা বহুকাল ধরেই মুখে বলে ‘অভিনয়ই আসল’, কিন্তু বাস্তবে সেটা প্রায়শই হয় না।

কে কেমন দেখতে, কে কত ফিট, কে কতটা “বাজারে চাহিদা আছে”— এসব বিচার করেই চরিত্র বাছা হয়। আর এই চাহিদার নিরিখে, মাঝবয়সি কেউ যতই দক্ষ হোন, তাঁর গায়ে ‘বাবা’ বা ‘কাকু’ ট্যাগটা একবার বসে গেলে, আর সহজে সরানো যায় না। তবে, অভিনয়টা সাগ্নিকের কাছে ছিল কখনওই শুধু একটা পেশা না। সেটা ছিল এমন কিছু যেটার জন্য জীবনকে নতুনভাবে গড়ে নিয়েছেন তিনি। আজ যখন বড়পর্দা থেকে ছোটপর্দায় তিনি কাজ করেন, চরিত্রটা যেন তাঁর মধ্যে গিয়ে মিশে যায়। সেই মিশে যাওয়ার সহজাত ক্ষমতাটাই তাঁকে আলাদা করে তোলে।

Piya Chanda