টেলিভিশন পর্দায় ‘নায়িকা’ (Actress) হওয়ার সংজ্ঞা যেন আজও সমাজ নির্ধারিত কিছু মাপে বাঁধা। বুক থেকে কোমর— নির্দিষ্ট মাপের বাইরে গেলেই শুরু হয় প্রশ্ন, সন্দেহ আর কটাক্ষ। ঠিক এই চেনা গণ্ডির বাইরেই দাঁড়িয়ে নিজের অস্তিত্ব নিয়ে যুদ্ধ করেছেন অভিনেত্রী ‘অরিজিতা মুখোপাধ্যায়’ (Arijita Mukhopadhyay)। যিনি একসময় নির্মেদ ছিলেন, ছিপছিপে গড়ন ছিল, কিন্তু শারীরিক গঠন বরাবরই ছিল চওড়া ও লম্বা। আর সেই কারণেই ছোট থেকেই তাঁকে বিভিন্ন নাটকে ‘পরিণত’ চরিত্রে অভিনয় করতে হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ পর্যন্ত অরিজিতার শরীর ছিল একেবারে ফিট। তবে সময়ের সঙ্গে ওজন একটু একটু করে বেড়েছে। যদিও তিনি কখনও ওজন নিয়ে উদ্বিগ্ন হননি। সুস্থ থাকাটাই ছিল তাঁর কাছে প্রাধান্য। মঞ্চের অভিনেত্রী হিসেবে কখনও শরীরকে প্রতিবন্ধকতা ভাবেননি তিনি। বরং মঞ্চ তাঁকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। কিন্তু টেলিভিশনের পর্দায় পা রাখার পরই চেহারা নিয়ে কটাক্ষ শুরু হয়। সহ-অভিনেতা-অভিনেত্রীরাই বলে ফেলতেন, “খুব খায়”, “জমি ফেটে যাবে”, “মোটা মানেই লোভী”— এমন সব অবাঞ্ছিত মন্তব্য।
প্রথম দিকে কষ্ট পেতেন অরিজিতা, প্রতিবাদও করতেন। কখনও সেটা কথায়, কখনও আবার চোখের জলে। ধারাবাহিকের দর্শকরাও কম যান না। চরিত্র ‘খল’ হলেই চরিত্রকে নয়, অভিনেত্রীকেই টার্গেট করেন অনেকে! ‘হাতি’, ‘জলহস্তী’— এমন অপমানজনক শব্দে সম্বোধন করতে পিছপা হননি অনেকেই। কিন্তু সব কিছুর মধ্যেও থেমে থাকেননি অরিজিতা। ছোট পর্দায় কাজ পেতে যখন চেহারাকে বাঁধা বানানো হয়েছিল, বলা হয়েছিল “মোটা ও দেখতে ভাল নয়”— তখন ভেঙে পড়েছিলেন।
টানা ১৮ দিন ঘর থেকে বেরোননি, আয়নাতেও মুখ দেখেননি। অবসাদ তাঁকে গ্রাস করেছিল, মনে হয়েছিল এবার সব শেষ। কিন্তু ঠিক তখনই পাশে দাঁড়িয়েছিলেন মা-বাবা, বন্ধু আর শিক্ষাগুরুরা। মনোবিদের কাছে সেই সময় যাওয়ার অবস্থা না থাকলেও, সেই সময়ের ওই মানুষগুলোর কথাই তাঁকে বাঁচায়। তাঁরা বলেন, ‘এই তুচ্ছ কথাগুলোকে যদি তুমি জিতে যেতে দাও, তাহলে হার হবে তোমারই।’ সেখান থেকেই ধীরে ধীরে ফিরে আসেন অরিজিতা।
আরও পড়ুনঃ একসময়ের পর্দার জনপ্রিয় মুখ বরুণ চক্রবর্তী, ইন্ডাস্ট্রির পলিটিক্সে হেরে গিয়েছিলেন! দু’বছর দূরে থেকেও ভুলতে পারেননি অভিনয়! আবার ফিরে আসতেই ইন্ডাস্ট্রির অন্ধকার রাজনীতি নিয়ে বি’স্ফো’রক মন্তব্য অভিনেতার!
নিজের শরীর, নিজের অবস্থান আর নিজের লড়াইকে আজ তিনি সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করেন। এই যাত্রা কেবল অরিজিতার একার নয়। এটা অনেক মেয়ের কথা, যারা সৌন্দর্যের তথাকথিত মাপকাঠিতে ফেলা যায় না বলে প্রতিদিনই নানা রকম বাঁকা কথা শুনতে বাধ্য হন। তাঁদের জন্য অরিজিতা মুখোপাধ্যায় এক জীবন্ত উদাহরণ— যে সৌন্দর্য আত্মবিশ্বাসের, যে লড়াইটা নিজের জন্য, আর যে সাফল্য গড়ে তোলা যায় সমস্ত বাধাকে চূর্ণ করে।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।