টলিউডে আজ যাঁর নাম বললে অধিকাংশ মানুষই চিনে ফেলেন পাশের বাড়ির আত্মীয়ার মতো, সেই অভিনেত্রী ‘মানসী সিনহা’র (Manasi Sinha) জীবনটা শুরু থেকেই অভিনয়ের আলোয় মোড়া। কিন্তু তাঁর জীবন কেবল ক্যামেরার সামনে নয়, অদ্ভুত কিছু অভিজ্ঞতারও সাক্ষী। ছোটবেলা থেকেই মঞ্চ ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী। মাত্র তিন বছর বয়সে মা মণিদীপা রায়ের হাত ধরে থিয়েটারের দুনিয়ায় পা রাখেন তিনি। সেই মঞ্চই ছিল তাঁর প্রথম পাঠশালা। অভিনয়ের জগতে ধীরে ধীরে নিজেকে গড়ে তুলতে গিয়েই পরিচয় ঘটে তরুণ মজুমদারের সঙ্গে, আর সেখান থেকেই শুরু অভিনেত্রী হয়ে ওঠা।
তবে জানেন কি, অভিনেত্রীর জীবনে রয়েছে হাড় হিম করা ভৌতিক অভিজ্ঞতা! জন্মের কিছুদিনের মধ্যেই আত্মাদের খপ্পরে পড়েছিলেন তিনি! কিভাবে নিস্তার পেলেন? কালীপুজো উপলক্ষে তিনি ভাগ করে নিলেন সেই কথা। আনওয়ার শাহ রোডে তাঁদের পুরনো বাড়িতে নাকি এক শিশু-কন্যার মৃ’ত্যু হয়েছিল বহু আগে। সেই মেয়েটির হাড়গোড় বাড়ির উঠোনেই চাপা ছিল, আর তারপর থেকেই অজানা এক শক্তির উপস্থিতি নাকি টের পেতেন মানসীর পরিবারের সবাই। ছোট্ট মানসীর জামা পরে সেই মৃ’ত শিশুর আত্মা নাকি বাড়ি ঘুরে বেড়াত-এমনই শুনেছিলেন মায়ের মুখে।
দিদা নাকি একদিন দেখেছিলেন, ঘুমন্ত মানসী নাকি হামাগুড়ি দিচ্ছেন ঘরে, অথচ বাস্তবে তিনি তখন গভীর ঘুমে। পরে বাড়িতে খোঁড়াখুঁড়ি করে যখন সেই হাড়গোড় পাওয়া গেল, তখন পরিবারের সবাই কেঁপে উঠেছিল। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই রহস্যময় অভিজ্ঞতাগুলোও তাঁর সঙ্গে থেকেছে। মানসী আরও বলেছেন, “আমার অশরীরীদের অনুভব করার ক্ষমতা আছে। মাঝেমধ্যেই এমন কিছু অনুভব করি, যা শুধু শরীরের নয় মনেও ছুঁয়ে যায়।” শ্বশুর-শাশুড়ির মৃত্যুর পর তিন মাসের ব্যবধানে ঘরে তাঁদের উপস্থিতি তিনি টের পেতেন তিনি!
বারবার মনে হয় যেন অদৃশ্য কেউ পাশে দাঁড়িয়ে আছে। হাঁটতে গেলে পা ভারী হয়ে আসত, গায়ে অজানা চাপ অনুভব করতেন। এক পরিচিত মানুষ তাঁকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে বাৎসরিকের পর এসব অনুভব মুছে যাবে, আর সত্যিই তাই হয়েছিল-বছর ঘুরতেই সবকিছু ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায়। তবে মানসী এইসব অভিজ্ঞতাকে ভয় হিসেবে দেখেন না। তাঁর বিশ্বাস, আত্মারা কেবল অদেখা জগতের অংশ, যাদের বিজ্ঞান হয়তো ব্যাখ্যা দিতে পারে, কিন্তু মানুষ হিসেবে আমরা তা পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারি না। তাঁর মতে, “ভূত মানেই আমাদের চিন্তার সীমার বাইরে এক অস্তিত্ব মাত্র।
আরও পড়ুনঃ মাধবপুরের কালীপুজোর আবহে দানা বাঁধছে রহস্য! সত্য জানার আগেই নতুন বিপদে অপর্ণা, মা না ছদ্মবেশে অন্য কেউ? তবে কি ফিরে এল রাজনন্দিনী, নাকি আবারও আর্যর কোনও পুরোনো শত্রু?
মৃ’তরা আমাদের মাঝে থেকেই কখনও কখনও জানান দেন তাঁদের উপস্থিতির কথা, কিন্তু তাতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।” মানসীর বিশ্বাস যে তাঁর বাবা-মা আজ নেই, কিন্তু তাঁরাই নাকি আত্মার জগত থেকে তাঁকে রক্ষা করেন। তাই কোনও দুষ্ট আত্মা যদি কখনও তাঁর পথে আসে, বাবা-মাই তাঁকে আগলে রাখবেন। তাঁর এই কথাগুলো শোনার পর বলাই যায়, অভিনয়ের আলোয় আলোকিত হলেও মানসীর জীবন জুড়ে রয়েছে রহস্য, বিশ্বাস আর অদেখা জগতের প্রতি এক গভীর শ্রদ্ধা– যা তাঁকে অন্যদের থেকে একটু আলাদা করে তোলে।