বাংলা সিনেমা বা ধারাবাহিকের ভুবনে এমন অনেকেই রয়েছেন, যাঁরা হয়তো মূল চরিত্রে কখনও ছিলেন না, কিন্তু যাঁদের ছোঁয়া ছাড়া গল্পই যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। ঠিক তেমনই একজন হলেন দেবাশীষ গাঙ্গুলী। দীর্ঘ দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে ছোটপর্দা থেকে বড়পর্দা—দু’দিকেই নিজের দক্ষ অভিনয়ের ছাপ রেখেছেন তিনি। তাঁর মুখভঙ্গি, সংলাপ বলার ভঙ্গিমা, কিংবা দৃশ্যপটে উপস্থিত থাকলেই দর্শক যেন স্বস্তি পান—এরকম বহুবার ঘটেছে। তবুও, লাইমলাইট বরাবরই যেন কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখেছে তাঁর সঙ্গে।
অনেকেই জানেন না, অভিনয়ের আগেই দেবাশীষ গাঙ্গুলী ছিলেন এক দক্ষ গায়ক। তাঁর মা অনিমা গাঙ্গুলীও গান জানতেন এবং পরিবারের সঙ্গীতচর্চার পরিবেশেই বড় হয়েছেন তিনি। সেই সূত্রেই গান শিখলেও, মঞ্চে নাটক করতে করতেই ধীরে ধীরে অভিনয়ের প্রতি টান জন্মায় তাঁর। স্কুলের নাটক ‘মধুচন্দ্রিমা’ থেকেই শুরু, পরে থিয়েটারে নিয়মিতভাবে যুক্ত হন জীবিকার তাগিদে। আর সেই থিয়েটারই হয়ে ওঠে তাঁর আসল শিক্ষা ও অভিনয়ের ভিত্তি।
থিয়েটার করতে করতেই দূরদর্শনে প্রথম সুযোগ পান দেবাশীষ। তাঁর প্রথম ধারাবাহিক ছিল বাংলার ডাকাত, এরপর চুনি পান্না ধারাবাহিকে অভিনয় করেই জনপ্রিয়তা পান তিনি। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি— এ ঘর সংসার, লুকোচুরি, নদের নিমাই, তিথির অতিথি, খোকাবাবু, আলোর ভাষা—প্রতিটি ধারাবাহিকেই দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছেন অভিনয়ের জোরে।
২০০৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত অর্জুন আমার নাম ছিল দেবাশীষ গাঙ্গুলীর প্রথম সিনেমা, যেখানে অভিষেক চ্যাটার্জী ছিলেন নায়ক। এরপর একের পর এক সিনেমায় দেখা গিয়েছে তাঁকে— সাথীহারা, মৃত্যু ঘন্টা, বিধাতার লেখা, উনিশ কুড়ির গল্প, সুরের আকাশে, প্রেমের কাহিনী, তুফান, সুলতান, হান্ড্রেড পার্সেন্ট লাভ—প্রতিটি ছবিতেই তিনি ছিলেন কখনও কৌতুক, কখনও পার্শ্বচরিত্রে, কিন্তু দৃশ্যপটে নজরকাড়া।
আরও পড়ুনঃ ‘আগে গল্প ধরে লেখা হত, এখন প্রতিদিন গল্প তৈরি হয়, তাই গল্পের মাথামুন্ডু নেই’, আমার বৃদ্ধা মা’ই আর ধারাবাহিক দেখতে চান না! অকপট রানা মিত্র
বর্তমানে বড় প্রোডাকশনের ছবিতে খুব একটা ডাক না পেলেও অভিনয় থেমে নেই তাঁর। পুতুল খেলা, আবার অরণ্যের দিনরাত্রি, জল্লাদ—এইসব কম বাজেটের সিনেমাতেও কাজ করে চলেছেন। এর পাশাপাশি থিয়েটারই তাঁর মূল অবলম্বন, বর্তমানে তিনি মাঙ্গলিক নাট্যদল-এর সঙ্গেও যুক্ত। হয়তো লাইমলাইটে নেই, কিন্তু ভাল অভিনয়ের প্রতি একনিষ্ঠতা আজও যে অটুট, তা বারবার প্রমাণ করে চলেছেন দেবাশীষ গাঙ্গুলী। অভিনয়ের প্রতি তাঁর ভালোবাসা এবং নিষ্ঠা হয়তো আগামীদিনে তাঁকে আরও ভালো সুযোগ এনে দেবে—এটাই প্রত্যাশা দর্শকদের।