টলিউডে ১৪ আগস্ট, বৃহস্পতিবারের সকাল ছিল সেই বহু প্রতীক্ষিত উৎসবের মতো। একেবারে ভোর ছ’টা থেকেই শহরের প্রেক্ষাগৃহে শুরু হলো দেব-শুভশ্রী (Dev-Shubhashree) অভিনীত ছবি ‘ধূমকেতু’-র (Dhumketu) বিশেষ শো। হাতে ব্যানার-পোস্টার, চোখে উচ্ছ্বাস নিয়ে ভোরবেলা থেকেই ভিড় জমাল ভক্তরা। প্রায় দশ বছর পর এই ‘দেশু’ (Desu) জুটি ফের বড়পর্দায় ফিরেছে, আর সেই উন্মাদনা যেন দর্শকদের মধ্যে আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। ছবিটির শুটিং হয়েছিল ২০১৫ সালে, কিন্তু নানা কারণে মুক্তি হয় না দীর্ঘ এক দশক।
মাঝের এই দীর্ঘ এক দশক, দেব ও শুভশ্রী একসঙ্গে কোনও কাজ করেননি, এমনকি মুখ দেখাদেখিও বন্ধ ছিল। এক সময়ের প্রেমিক যুগলের, ব্যক্তিগত সম্পর্কও ছিল ভিন্ন পথে। তবে সময়ের ব্যবধান ও অতীতের দূরত্ব পেরিয়ে তাঁরা আবারও এক হয়েছিলেন এই ছবির গল্পের টানে। এটাই ছিল তাদের একসঙ্গে কাটানো শেষ মুহূর্ত, এরপর এতগুলো বছরের নীরবতা। অবশেষে মুক্তি পেল সেই ছবি, এই মুক্তিকে ঘিরেই আবার এক হলেন দু’জনে। ‘ধূমকেতু’র শুটিংয়ের সময়ের কিছু মজার মুহূর্ত এখন ফের স্মৃতির অ্যালবামে ভেসে উঠছে।
নৈনিতালের এক মনোরম পাহাড়ি এলাকায়, শীতের পোশাকে বেঞ্চে বসে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন দেব-শুভশ্রী। চার বছরের ব্যবধানেও তাঁদের মধ্যে খুনসুটি, ঠাট্টা আর পুরনো সখ্য অটুট ছিল। দেব মজা করে বলেছিলেন, রোজ শুভশ্রী তাঁকে ফোন করে একসঙ্গে কাজের অনুরোধ করতেন, একদিন তিনি রাজি হয়ে যান। শুভশ্রীও পাল্টা হাস্যরসের সুরে বলেন, সেই ফোনগুলোর বিলও নাকি দেব মেটাতেন! স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল, ব্যক্তিগত মতভেদ থাকলেও কাজের জায়গায় তাঁদের বোঝাপড়া ও আড্ডা আগের মতো একইরকম প্রাণবন্ত।
ছবির গল্প নিয়ে শুভশ্রী জানান, তাঁর চরিত্রের নাম রূপা—এক পাহাড়ি মেয়ে, সাধারণ পরিবারে বেড়ে ওঠা, প্রেম, বিয়ে, আর এরপর জীবনে এক অপ্রত্যাশিত মোড়। চরিত্রটিতে রয়েছে নানা শেডস, যা দর্শকদের আবেগ ছুঁয়ে যাবে। দেব যদিও হেসে তাঁকে গল্প ফাঁস না করতে সতর্ক করেছিলেন। অপরদিকে দেবের চরিত্র ‘ভানু’র কাহিনির মাধ্যমে উঠে আসবে বন্ধ হয়ে যাওয়া চা বাগানের শ্রমিক পরিবারের সংগ্রামের চিত্র। অভিনেতা হিসেবে দেব নিজেই বলেন, গল্পটি “নেক্সট জেনারেশন ফিল্ম” ধাঁচের, যা চমকে দেবে দর্শকদের।
প্রযোজক হিসেবে দেবকে শুভশ্রী নেওয়ার প্রসঙ্গ উঠলেও জানা যায়, পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ইচ্ছাতেই এই জুটি তৈরি হয়েছে। শুভশ্রী বলেন, যদিও দেব প্রযোজক হিসেবে যুক্ত, তবুও তিনি এই ছবিতে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন গল্প ও চরিত্রের গভীরতার জন্য। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের কলমে যে আবেগের ছোঁয়া থাকে, তা এই ছবিতেও স্পষ্ট। অভিনয়ের জন্য এখানে অনেক বেশি সুযোগ থাকায় তিনি এক সেকেন্ডও সময় নেননি রাজি হতে।
আরও পড়ুনঃ দীর্ঘ বিরতির পর ছোটপর্দায় ফিরছেন শ্রুতি দাস, বোনের অভিনয় এবার কি সঙ্গে থাকছেন অভিনেত্রী আরাত্রিকা মাইতি?
দশ বছরের অপেক্ষা, ব্যক্তিগত সমীকরণের ওঠাপড়া, আর শুটিংয়ের মজার খুনসুটি, প্রমোশনে রং মিলন্তি পোশাক— সব মিলিয়ে ‘ধূমকেতু’ শুধু একটি সিনেমা নয়, দেব-শুভশ্রীর জন্য এক আবেগঘন প্রত্যাবর্তন। ভক্তদের কাছে এটি পুরনো দিনের জুটি ফিরে পাওয়ার আনন্দ, আর তাঁদের জন্য এটি পেশাদার ও ব্যক্তিগত পথচলার নতুন অধ্যায়। মুক্তির দিনেই যেভাবে দর্শকেরা ভোরবেলা প্রেক্ষাগৃহে ভিড় জমালেন, তাতে স্পষ্ট— দীর্ঘ বিরতির পরেও এই জুটির জনপ্রিয়তা একটুও কমেনি।