বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা কালজয়ী গল্প পথের পাঁচালীকে নিজের সুনিপুণ দক্ষতায় পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন বাঙালির গর্ব সত্যজিৎ রায়। এই সিনেমা আজও বাঙালির ঐতিহ্য। এই সিনেমার মোহ থেকে কোনদিনই হয়তো বাঙালিকে বের করা যাবে না।
আজ এতগুলো বছর বাদেও অপু-দুর্গা বাঙালির মন জুড়ে রয়েছে। তাঁদের বয়সও বাঙালির চোখে থমকে গেছে সেখানেই। সত্যজিৎ রায়ের এই কালজয়ী সিনেমার অংশ ছিলেন অভিনেত্রী উমা দাশগুপ্ত।
কে ছিলেন তিনি? প্রসঙ্গত, উমা দাশগুপ্ত ছিলেন সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালী সিনেমার ছোট্ট দুর্গা। এই চরিত্রগুলোকে জীবন্ত করে তুলতে বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে ঘুরে নিয়ে এসেছিলেন প্রতিথযশা পরিচালক সত্যজিৎ রায়। বিশেষ করে এই দুর্গা চরিত্রটিকে নিজের মতো করে গড়ে তুলেছিলেন সত্যজিৎ রায়।
একজন কৌতূহলী দুরন্ত মেয়ের চরিত্রে নিজেকেও সব দিয়ে সাজিয়েছিলেন উমা দাশগুপ্ত। করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি এই সিনেমায় সর্বজয়ার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তাঁর চেহারার সঙ্গেই উমা দাশগুপ্তের সেই সময়ের চেহারার ভীষণ মিল ছিল। আর তাই উমাকেই দুর্গা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়।
কিন্তু জানা যায় রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে ছিলেন উমা দাশগুপ্ত। তার বাবা যাননি মেয়ে অভিনয় দুনিয়ায় পা রাখুক। যদিও সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা বলে অনুমতি দিয়েছিলেন। দস্যী ভাইবোনের চরিত্রে অপু-দূর্গা নজর কেড়েছিলেন। গোটা দিন এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ানোই তাঁদের কাজ ছিল। দিদির চোখ দিয়ে প্রকৃতিকে চিনত অপু।
সিনেমার পর্দায় দুর্গার মৃত্যুতে চোখ ভিজে ছিল কত শত বাঙালির তা আজও জানা নেই। এই ছবির দুর্গা আজও বাঙালির মননে রয়ে গেছেন। পথের পাঁচালী তৈরির সময় বেশি অর্থ কষ্টে ভুগতে হয়েছিল পরিচালক সত্যজিৎ রায়কে। জানা যায় এই সিনেমায় অভিনয়ের জন্য এক টাকাও নেননি উমা দাশগুপ্ত। আসলে সত্যজিতের সঙ্গে কাজ করাটাই ছিল তাঁর জীবনের বড় পাওনা।
কিন্তু এখন কেমন আছেন এই বর্ষীয়ান অভিনেত্রী? বেশ কিছু মিডিয়া ইতিমধ্যেই তাঁকে মেরে ফেলেছে। খবর রটেছিল ২০১৫ সালে বার্ধক্য জনিত কারণে নাকি তাঁর মৃত্যু হয়। যদিও পুরোটাই ভুয়ো। অনীক দত্তর অপরাজিত সিনেমা মুক্তির পর সিনেমার কিছু ভুল ত্রুটি নিয়ে মুখ খুলে প্রকাশ্যে এসেছিলেন তিনি। যদিও তার পরে মিটমাট হয়ে যায়। বর্তমানে ভালো আছেন এই অভিনেত্রী।