ত্বরিতা চট্টোপাধ্যায় (Twarita Chatterjee) ছোটপর্দার অন্যতম পরিচিত মুখ। তিনি শুধু একজন অভিনেত্রীই নন, বর্তমানে একজন সফল ডায়েটিশিয়ানও। ত্বরিতার জীবনের গল্প শুধুমাত্র অভিনয় জগৎকেই ঘিরে নয়, বরং তা তার সংগ্রাম ও পরিবারিক চ্যালেঞ্জের এক প্রামাণিক কাহিনীও বটে। পরিবারের দ্বিতীয় সন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণ করা ত্বরিতার জীবনে প্রথম থেকেই লড়াই শুরু হয়েছিল। তার জন্মের পরপরই পরিবারে সমালোচনা ও কটাক্ষের শিকার হন তিনি। বিশেষ করে পরপর দুটি মেয়ে হওয়ায় তাকে এবং তার মাকে অপমানিত হতে হয়েছিল।
ত্বরিতা জানান, জন্মের পর থেকেই তার মা নানা ধরণের কটাক্ষের শিকার হন, কারণ তার পরিবার দ্বিতীয়বারও মেয়ে পেয়েছিল। এই কটাক্ষের পরেও ত্বরিতার বাবা তাঁদের পাশে ছিলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, যখন ত্বরিতা ৯-১০ বছর বয়সে তখন তিনি তার বাবাকে হারান। এরপর তার এবং তার পরিবারের জন্য নতুন এক সংগ্রামের শুরু হয়। তবে ত্বরিতার মা ছিলেন অত্যন্ত শক্তিশালী, এবং তিনি তাদের কখনও বাড়ি থেকে বের করার প্রচেষ্টাকে সফল হতে দেননি। ছোট থেকেই মা-র পাশে দাঁড়াতে শিখেছিলেন ত্বরিতা।
এমন পরিস্থিতিতে ত্বরিতা অভিনয়ে আসার আগে মডেলিং শুরু করেন। ১৭-১৮ বছর বয়সে একটি নামী ম্যাগাজিন থেকে মডেলিংয়ের অফার পান তিনি। কিন্তু ত্বরিতার পরিবার তখনও তার অভিনয়ে আসার পক্ষে ছিল না। এমনকি একটি জনপ্রিয় সিরিয়ালের নায়িকা হওয়ার প্রস্তাবও তিনি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তার পরিবর্তে, তিনি আরও ভাল চরিত্রে অভিনয় করতে চান। তবে তার মায়ের একমাত্র শর্ত ছিল, মডেলিং এবং অভিনয়ের পাশাপাশি তাকে এমএসসি (M.Sc) ডিগ্রি অর্জন করতে হবে।
ত্বরিতা তার মায়ের শর্ত রেখেই কঠোর পরিশ্রম করতে থাকেন। একদিকে ২১-২২ ঘণ্টা শুটিং, অন্যদিকে রাত জেগে পড়াশোনা করে এমএসসি শেষ করেন। তবে অভিনয়ের ক্ষেত্রে তার পথ খুব সহজ ছিল না। বড়পর্দায় নায়িকা হিসেবে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েও তার পাঁচটি সিনেমা আচমকা বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনি হাল ছাড়েননি, এবং আবার ছোটপর্দায় ফিরে এসে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
আরও পড়ুনঃ দুঃসংবাদ! গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি অভিনেত্রী জয়শ্রী মুখোপাধ্যায়! কি হয়েছে অভিনেত্রীর?
বর্তমানে ত্বরিতা চট্টোপাধ্যায় শুধুমাত্র একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রী নয়, একজন সফল ব্যবসায়ীও। তিনি একজন ডায়েটিশিয়ান, তার একটি ক্যাফে এবং একটি অনলাইন ডিজাইনার হাউস রয়েছে। তার জীবনযাত্রা এবং সাফল্য আজ তার পুরনো পরিবারিক সদস্যদের কাছ থেকে সমর্থন এবং সম্মান পেয়েছে, যারা একসময় তাকে তুচ্ছজ্ঞান করত। ত্বরিতা তার জীবন দিয়ে প্রমাণ করেছেন, একাগ্রতা এবং সংগ্রামের মাধ্যমে সব চ্যালেঞ্জকেই অতিক্রম করা সম্ভব।