অভিনয় জগৎ (Acting) কখনওই তাঁর প্রথম পছন্দ ছিল না। ছোট থেকেই শিল্পী পরিবারে বেড়ে উঠলেও পর্দার সামনে নয়, বরং ক্যামেরার পেছনের দুনিয়া তাঁকে বেশি টেনেছে। মাস কমিউনিকেশন (Mass Communication) নিয়ে পড়াশোনা চলাকালীন সময়ে ভিডিওগ্রাফির প্রতি গড়ে ওঠে গভীর টান। ঠিক তখনই জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় এক ফোন-কল ডাকেন খোদ ‘ঋতুপর্ণ ঘোষ’ (Rituparno Ghosh) । পরিচালকের কথায় আর মায়ের অনুরোধ ফেলতে পারেননি, অভিনয় করেন ‘উৎসব’ ছবিতে।
তবে সেটাই ছিল প্রথম এবং সম্ভাব্য শেষ অভিনয়, কারণ এরপর প্রায় পঁচিশ বছর আর কোনও ছবিতে দেখা যায়নি তাঁকে। তিনি আর কেউ নন, ‘রাতুল শঙ্কর’ (Ratul Shankar), বিশিষ্ট অভিনেত্রী ও নৃত্য শিল্পী ‘মমতা শঙ্কর’ (Mamata Shankar) এর বড় ছেলে। যাঁর শিরায় বইছে রীতিমতো শিল্পের রক্ত, কিন্তু নিজেকে রেখেছিলেন ক্যামেরার আড়ালে! দীর্ঘ বিরতির পর ফের অভিনয়ে পা রাখলেন পরিচালক সত্রাজিৎ সেনের হাত ধরে।
‘চেক ইন চেক আউট’ ছবিতে ‘গিরিন্দ্র মোহন’ নামক একটি ব্যতিক্রমী চরিত্রের জন্য দরকার ছিল একেবারে অন্যরকম মুখ। প্রচলিত নায়কসুলভ চেহারা নয়, বরং পরিণত ও গভীর ব্যক্তিত্ব। অনেক খোঁজাখুঁজির পর মেলে রাতুলের নাম, এবং সেখান থেকেই শুরু হয় ফের এক নতুন অধ্যায়। ছবির মুক্তির পর দর্শকমহলে বেশ সাড়া ফেলেছে রাতুলের অভিনয়। ছবিটি মুক্তি পায় ১৮ এপ্রিল, আর তারপর থেকেই প্রশংসা কুড়োচ্ছে নানা মহলে।
চরিত্রের সূক্ষ্মতা, সংলাপ বলার ভঙ্গি এবং সংযত অভিনয়ে স্পষ্ট তাঁর অভিজ্ঞতা ও পারিবারিক শিক্ষার ছাপ, দর্শকরা যেমন মুগ্ধ, তেমনই খুশি পরিচালকও। রাতুলকে নিয়ে তাঁর সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল, সেটা প্রমাণ করে দিয়েছে ছবিটি। সম্প্রতি কলকাতায় ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামে ছবির তৃতীয় সপ্তাহেও সাফল্যকে উদযাপন করতে অনুষ্ঠিত হলো এক বিশেষ প্রোগ্রাম। এদিন অনেক নামি ব্যক্তিত্বরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
রাতুলের শিল্পী পরিবারে জন্ম। মা মমতা শঙ্কর যেমন দারুন অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী, এদিক সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বললেন, “ছেলের জন্য ভীষণ গর্ববোধ করছি। আবার ২৫ বছর পর ওর ফিরে আসাটা যে এমন হবে, কল্পনাও করিনি। আমি সত্রাজিৎকে ধন্যবাদ দিতে চাই, ও যে এই চরিত্রে রাতুলকে ভেবেছে।” কথা বলতে বলতে তাঁর কথা জড়িয়ে যেতে লাগলো আনন্দে, চোখে ধরা পড়ল গর্বের চাপ।
আরও পড়ুনঃ “মা বলতেন আমার মেয়ে কালো বাজারে পাত্র পাওয়া যাবে না! তাই ছোট থেকে নাচ গান অভিনয় সব শিখিয়েছেন”, বিয়ের জন্য নিজেকে কিভাবে তৈরি করেছিলেন অনামিকা সাহা?
তিনি আরও বলেছেন, “আমি চাই আর যাই করুক শুধু যেন আমার ছেলেরা মানুষের মত মানুষ হয়। আমার দুই ছেলেরাই ক্যামেরার সামনে আসতে চায় না। কিন্তু ছোট ছেলে যদি কখনও আসে তাহলে তিনি এর থেকেও বেশি খুশি হব।” এদিন কথা বলতে গিয়ে আবেগে ভেসে যান মমতা শঙ্কর নিজেই। ছেলের প্রতি গর্বের কথা বলতে গিয়ে তাঁর চোখ ছলছল করে ওঠে, পরিচালকের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।