আন্তর্জাতিক নারী দিবসে যত ঢাকঢোল, পুরুষ দিবসে কি ততটা গুরুত্ব? সমাজের প্রশ্ন এখন আরও গভীর— পুরুষতন্ত্রের শতাব্দী পার করে আজও কি নারীর অবস্থান সমান জায়গায় পৌঁছতে পেরেছে? গ্ল্যামার জগত থেকে কর্পোরেট, সর্বত্রই এখনও পুরুষদের প্রাধান্য টের পাওয়া যায়। নায়িকাকেন্দ্রিক সিনেমা কম, মহিলা পরিচালকের সংখ্যা হাতে গোনা। দীপিকা পাড়ুকোন কাজের সময়সীমা নিয়ে প্রশ্ন তুললেই সমালোচনা, অথচ একই নিয়মে অক্ষয় কুমার দিব্যি পার পেয়ে যান! আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস উপলক্ষে এই সবকিছু নিয়েই মুখ খুললেন চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী, শ্রীলেখা মিত্র, রূপাঞ্জনা মিত্র এবং তথাগত মুখোপাধ্যায়।
চিরঞ্জিৎ শুরুতেই রসিকতা ছুড়ে প্রশ্ন করেন— “নারীদের কি উদ্যাপনের জন্য আরও দিনের প্রয়োজন?” কিন্তু পরক্ষণেই জানান, নারীদের অগ্রগতির জন্য বেশি সচেতনতা জরুরি। তাঁর মতে, আজ মেয়েরা অনেক এগিয়েছে— বিমান চালানো থেকে সেনাবাহিনী, সর্বত্রই তাঁদের পদচারণা। তবে এই সাফল্যের ভিত্তি হলো শিক্ষা ও স্বনির্ভরতা। তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, “শিক্ষিত মা-ই শিক্ষিত সমাজ গড়ে।” তাই আর্থিক স্বাধীনতা ও আত্মরক্ষার দক্ষতা অর্জন, দুটোই নারীর প্রকৃত মুক্তির পথ।
অভিনেতা-পরিচালক তথাগত মুখোপাধ্যায় উৎসবের ধারণাকেই অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেন। তাঁর মতে, ভাল-মন্দ সবার মধ্যেই থাকে। তাই পুরুষ দিবস মানে পুরুষকে নয়, মানবিকতার সৎ দিক উদ্যাপন। তবে তিনিও মানেন, সমাজ এখনও পুরুষের দৃষ্টিকোণ দিয়ে সবকিছু বিচার করে, নাম লেখা থেকে বিল দেওয়া সব জায়গায় পুরুষই সামনে। তাঁর মত, সমাজে মাতৃতান্ত্রিকতা ফিরে এলে পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্ভব, যদি নারীরাও নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলান।
আরও পড়ুনঃ চর্চার ঝড়ের মাঝেও দিতিপ্রিয়া রায়ের নিজের জীবনের গোপন দিক ফাঁস! মন খারাপ থাকলে একা নয়, নির্জন গঙ্গার ধারে গিয়ে চা খান এক বিশেষ সঙ্গীর সঙ্গে! কে সেই মানুষ, যার সঙ্গেই এখন সবচেয়ে শান্তি পান অভিনেত্রী?
শ্রীলেখা মিত্রের মতে, লিঙ্গ বিভাজন নয়, সমতা জরুরি। তিনি নিজেকে নারীবাদী বলেন না, তবে স্বীকার করেন, নারী শারীরবৃত্তীয়ভাবে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। তাই মানসিক সমর্থন ও সহমর্মিতা সময়ের দাবি। অন্যদিকে রূপাঞ্জনা মনে করেন, “পুরুষ মানেই অত্যাচারী” এই ভুল ধারণা নারীকেই ভাঙতে হবে। তাঁর অভিজ্ঞতা বলছে, সব পুরুষ এক নয়, এবং পরিবর্তনের সেতু তৈরি করতে পারে পুরুষই।
সারকথা, সমাজে বাস্তব পরিবর্তনের জন্য দরকার পারস্পরিক সম্মান, সমতা এবং দৃষ্টিভঙ্গির বদল। আর সেই আলোচনার মঞ্চ হিসেবেই গুরুত্ব পাচ্ছে আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস।
