কঠিন ব্যাধির কারণে অকালেই প্রাণ হারান রিতা কয়রাল। যকৃতে কর্কটরোগ বাসা বেঁধেছিল, গত হয়েছেন ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর। তবে অনেকেরই মনে রয়েছে হয়তো মৃত্যুর কয়েক বছর আগে অভিনেত্রী রিতার তোলা একটি অভিযোগের কথা। গুরুতর অভিযোগ তুলেছিলেন বলিউড অভিনেতা অনুপম খেরের বিরুদ্ধে। আর সেই অভিযোগের সঙ্গে ওতোপ্রতভাবে জড়িয়ে ছিল ঋতুপর্ণ ঘোষের একটি ছবি।
রিতার কেরিয়ার ধ্বংস করে দেবেন, এমনভাবেই রীতিমতো শাসিয়ে ছিলেন অনুপম। বলেছিলেন, মুম্বইয়ে ঢুকতে দেবেন না, কলকাতাতেও কীভাবে কাজ পান, সেটাও নাকি আটকে দেবেন। একটি জনপ্রিয় টক শোতে এমনই গুরুতর অভিযোগ অনুপমের বিরুদ্ধে রিতা এনেছিলেন। রিতা টলিউডের একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রী। তাঁকে মূলত নেগেটিভ চরিত্রেই আমরা দেখেছি। সিনেমার পাশাপাশি সিরিয়ালেও তিনি অভনয় করেছেন। কিন্তু রিতা ভক্তদের দাবি, তিনি তাঁর প্রাপ্য সম্মান পাননি। এমনকি জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার ক্ষেত্রেও তিনি বঞ্চিত হন।
অনেকেই মনে করেন, এক গভীর ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়েছিলেন তিনি। দূরদর্শনে সংবাদভাটিকা হয়ে রিতার ক্যারিয়ার শুরু। নাচেও ব্যাপক পারদর্শী ছিলেন তিনি। আর এই নাচের সূত্র ধরেই অভিনয় জগতে প্রবেশ। প্রথমে পরিচালিকার চরিত্রেই অভিনয় বেশি করতেন। এরপর তিনি একটি টেলি ছবিতে নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেন। সেখানেই রিতার অভিনয় সকলের নজর কাড়ে। কৃষ্ণপাল চৌধুরীর পরিচারিত ‘জননী’ ধারাবাহিকে অভিনয় করেই তিনি সবচেয়ে বেশি পরিচিত পান। এরপর আর তাঁকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। পরপর তিনি বড় বড় রোল পেতে শুরু করেন।
অপর্ণা সেন, ঋতুপর্ণ ঘোষ ও অঞ্জন দত্তের ছবিতেও অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী। ধারাবাহিকের পাশাপাশি একাধিক সিনেমাতেও কাজ করেছেন তিনি। পূজা, জীবন নিয়ে খেলা, অসুখ, আশ্রম, বর আসবে এখুনি প্রভৃতি নানান জনপ্রিয় সিনেমায় তাঁকে দেখা গিয়েছে। তাঁর শেষ ছবি রাজ প্রোডাকশনের ‘অতিথি’। অভিনেতা সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। ‘খেলাঘর’ ছবিতে তাঁরা স্বামী-স্ত্রীর ভূমিকায় একসঙ্গে অভিনয় করেন। তবে সৌমিত্রের সঙ্গে রিতা বেশিদিন সংসার করতে পারেননি। কিছু বছরের মধ্যেই সৌমিত্র মারা যান। এরপর নিজের নাচের স্কুল খোলেন তিনি। করেন দ্বিতীয় বিয়ে।
অভিনেত্রীর ট্যালেন্ট হল, তিনি ২০ পাতার স্ক্রিপ্ট একবার দেখেই করে দিতে পারতেন। ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘বাড়িওয়ালি’ ছবিতে রিতা ডাবিং করেন। ছবিটি জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার জন্য মনোনীত হলেও ডাবিং নিয়ে তৈরী হয়ে বিতর্ক। জুড়ি বোর্ডের সদস্যরা রিতা ও কিরণকে একসঙ্গে যৌথভাবে পুরস্কার দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রযোজক অনুপম খের জানিয়ে দেন, এই ডাবিং রিতা করেনি। কিন্তু এই বিষয় নিয়ে টলিউডের তাবড় তাবড় তারকারা চুপ ছিলেন, কেউ মুখ খোলেননি। উল্টে অনুপম হুমকি দেন রিতাকে। এরজন্যই রিতার হাত থেকে জাতীয় পুরস্কার হাত ছাড়া হয়ে যায়। তারপর হাসিমুখেই ইন্ডাস্ট্রি থেকে বিদায় নেন রিতা। তাঁর চলে যাওয়া অভিনয় জগতে এক বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি করে।