বাংলা চলচ্চিত্র জগতের এক নির্ভরযোগ্য নাম ‘রজতাভ দত্ত’ (Rajatava Dutta)। অভিনয়ের জগতে দীর্ঘ দুই দশকের বেশি সময় ধরে তিনি নিজের জায়গা তৈরি করেছেন কঠোর পরিশ্রম আর অভিনয়গুণে। চরিত্রে ঢুকে যাওয়ার তাঁর অসাধারণ ক্ষমতা তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলে। তাঁকে কখনও দেখা যায় নির্মম খলনায়কের চরিত্রে, কখনও বা রসিক, হালকা মেজাজের মানুষ হিসেবে— প্রতিটি ভূমিকাতেই তিনি দর্শকের মনে গভীর ছাপ ফেলেন। মূলধারার বাণিজ্যিক সিনেমা থেকে শুরু করে বিকল্প ধারার চলচ্চিত্র, থিয়েটার কিংবা সাম্প্রতিক সময়ে ওটিট— সব জায়গায়ই তিনি নিজের অভিনয়ের ছাপ রেখে চলেছেন।
তাঁর স্পষ্টবাদী স্বভাব বরাবরই নজর কেড়েছে সহকর্মী এবং দর্শকের। রজতাভ নিজের মতামত বলতে কখনও কুণ্ঠাবোধ করেন না। বেশ কিছুদিন আগে এক সাক্ষাৎকারে তিনি সহ অভিনেতা ‘পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়’কে (Parambrata Chatterjee) নিয়ে বেশ খোলামেলা মন্তব্য করেছিলেন। মজার ছলে হলেও কথাগুলোর মধ্যে ছিল তাঁর অভিজ্ঞতার বাস্তবতা। তিনি জানিয়েছেন, একসময় পরমব্রত ছিলেন বেশ স্বাধীনচেতা—তখন তাঁর আচরণ অনেকের চোখে ‘ডিরেক্টরের দুঃস্বপ্ন’ বলেই মনে হতো। তবে এখন নাকি পরমব্রত অনেকটাই পরিণত হয়েছেন, দায়িত্বশীলও বটে।
রজতাভ দত্তের কথায়, “পরম এখন শুধরে গেছে, কিন্তু বিদেশে যাওয়ার আগে পর্যন্ত পুরো মামদোবাজি করেই কাজ চালাত! বিদেশ ওকে ওই চাবিটা দিয়েছিল, কারওর ধার ধারত না। সমস্ত ডিরেক্টরের দুঃস্বপ্ন যেসব অভিনেতা-অভিনেত্রীরা আসেন, তাদের মধ্যে পরম একজন! সেই সময় বিদেশে এতটা শুটিং হতো না, সেইবার একটা শুটিংয়ের জন্য বিদেশে যাওয়া হয়েছে। তখন পরম ফেলুদার তোপসে চরিত্রে অভিনয় করে। ব্যাংককে শুটিং হবে জেনেও হাতে গোনা ডেট নিয়ে গেছে!
তার উপরে শুটিংয়ে কখনও সময়ে মতো আসত না। একদিন তো সকালে পুরো ইউনিট পরমের জন্য অপেক্ষা করছে। একেই সে দেরি করে ঘুম থেকে উঠেছে, আবার জিমে চলে গেছে! একদিন জিম না করলে যেন ওর শরীর নাকি টস্কে যাবে। আমরা সবাই হা করে বসে আছি। নিপাট ভদ্রলোক বেণুদা, টোটা রায়চৌধুরী— সবাইকে সেদিন অপেক্ষা করিয়েছিল। পরম অনায়াসে তখন এগুলো করতে পারত।” তবে রজতাভের কথার মধ্যে পরমব্রতের প্রতি একরাশ স্নেহও স্পষ্ট। তিনি স্বীকার করেছেন, পরম এখন অনেকটা বদলে গেছেন।
আরও পড়ুনঃ “বিশ্বকাপ হোক বা জীবনের মঞ্চ, মেয়েদেরই সব সময় নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হয়!” “বাইরের জগতে সাফল্য পেলেই তালি, কিন্তু নিপুণ হাতে সংসার সামলানো গৃহিণীকে কি আমরা ততটাই মর্যাদা দিই?”— নারীদের উদযাপন হোক সর্বত্র, অকপট সোহিনী!
বিগত বছরগুলোতে পরমব্রত অভিনয় থেকে পরিচালনা—সব ক্ষেত্রেই নিজেকে নতুনভাবে গড়েছেন। সম্প্রতি তাঁর ব্যক্তিগত জীবনেও বড় পরিবর্তন এসেছে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে অভিনেতা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তাঁর ‘পিয়া চক্রবর্তী’র সঙ্গে। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাঁদের সন্তানসম্ভবা হওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসে, এবং কিছুদিন আগে পিয়া পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েছেন। সব মিলিয়ে, রজতাভ দত্তের মন্তব্য শুধু একটি ঘটনার বর্ণনা নয়, বরং বাংলা চলচ্চিত্র জগতের অভ্যন্তরের এক অংশের প্রতিচ্ছবি। এই শিল্পে যেখানে সময়, শৃঙ্খলা আর পেশাদারিত্বের গুরুত্ব অপরিসীম, সেখানে অভিজ্ঞ অভিনেতাদের এই স্মৃতিচারণা তরুণ প্রজন্মের জন্য শিক্ষণীয়।
