বাংলা চলচ্চিত্র জগতের এক সময়ের পরিচিত নাম সজল দে। শিশু শিল্পী হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও দর্শকদের কাছে তিনি বেশি পরিচিত ছিলেন ‘মাস্টার রিন্টু’ নামেই। ছোটবেলাতেই টানা কাজ করে ফেলেছিলেন প্রায় ২০০টিরও বেশি ছবিতে। সেই সময়ে নামডাক যেমন পেয়েছেন, তেমনই বড় বড় তারকাদের সঙ্গেও ভাগ করে নিয়েছেন পর্দা। অথচ, আজ বহু বছর পর তাঁকে খুব একটা দেখা যায় না সিনেমার পর্দায়।
সজলের জীবন থেমে যায় মাধ্যমিক পরীক্ষার সময়। বাবার অসুস্থতা আর সংসারের আর্থিক টানাপোড়েন তাঁকে অভিনয় থেকে সরিয়ে দেয়। হাতে গোনা কয়েক বছরের মধ্যে যিনি এত বড় নাম করেছিলেন, তাকেই পেশা বদলে স্থির জীবনের খোঁজে ছুটতে হয়েছিল। দীর্ঘদিন ইন্ডাস্ট্রিতে থেকেও যখন প্রয়োজন ছিল, তখন পাশে দাঁড়ায়নি কেউ। তাঁর নিজের কথায়, তাপস পাল, সন্ধ্যা রায়, শতাব্দী রায়ের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করেও আজ তিনি ভুলে যাওয়া এক নাম।
আক্ষেপের সুরে সজল জানিয়েছেন, আজকাল যাদের অভিনয়ের ন্যূনতম দক্ষতাও নেই, তারাও সুযোগ পাচ্ছেন। অথচ তিনি নিজে অঞ্জন চৌধুরী, তরুণ মুখার্জীর মতো পরিচালকের হাতে তৈরি একজন অভিনেতা। তাঁর বিশ্বাস, সুযোগ পেলে এখনও যেকোনো চরিত্রে দক্ষতা প্রমাণ করতে পারবেন তিনি। শিল্পী হিসেবে অবহেলার বেদনা আজও তাড়া করে তাঁকে।
শুধু পেশাগত নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও এক বড় লড়াই চালাচ্ছেন সজল। বছর কয়েক আগে কন্যা সন্তানের বাবা হন তিনি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাঁর মেয়ে অটিজমে আক্রান্ত। আজ সাত বছর বয়স হলেও মেয়ের মুখে এখনও ‘বাবা’ ডাকটি শোনেননি তিনি। ভাঙা গলায় সজলের স্বীকারোক্তি— “আজ সাতটা বছর পরেও আমি বাবা ডাক শুনতে পেলাম না, তবে যুদ্ধ চলবেই।”
আরও পড়ুনঃ “যারা মনে করেন পরমা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন আর গান গাইতে পারেন না তারা একেবারেই ভুল, আগামী ১০-১৫ বছরও আমি গান গাইতে পারব”— দাবি ‘রোজগেরে গিন্নি’ খ্যাত অভিনেত্রী পরমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের!
জীবনের এত ওঠাপড়া, দুঃখ আর লড়াইয়ের মাঝেও অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা হারাননি সজল। এখনও তাঁর আশা, একদিন আবারও সুযোগ মিলবে, আর সেই সুযোগে নিজের প্রতিভা দিয়ে দর্শকের মন জয় করবেন তিনি। হয়তো সেই দিনের অপেক্ষাতেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন এই অভিনেতা, যিনি একসময় ছিলেন বাংলা সিনেমার পরিচিত মুখ ‘মাস্টার রিন্টু’।