বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ‘উত্তম কুমার’ (Uttam Kumar) ও ‘সুচিত্রা সেনে’র (Suchitra Sen) জুটি আজও কিংবদন্তি। তাঁদের মতন কালজয়ী জুটি (Cult Classic Pair) আরেকটা হবে কি না সেই নিয়ে সন্দেহের শেষ নেই। তাঁদের অনস্ক্রিন রসায়ন আপামর দর্শকদের মুগ্ধ করলেও, পর্দার আড়ালে তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে নানা গল্প প্রচলিত রয়েছে। এমনই একটি ঘটনা ঘটে কালজয়ী ছবি ‘পথে হলো দেরি’ (Pathe Holo Deri) শুটিংয়ের সময়, যাকে আজও মনে করা হয় বাংলা সিনেমার ইতিহাসে বিরল ঘটনা!
সালটা ছিলো ১৯৫৬, জোর কদমে চলছে ‘পথে হলো দেরি’ শুটিং। সেই সময় ছবির কিছু দৃশ্যের শুটিং চলছিল কলকাতার বাইরে। সুচিত্রা সেনের সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্বামী দিবানাথ সেন, আর উত্তম কুমারের সঙ্গে ছিলেন তাঁর বন্ধু ও ফটোগ্রাফার শম্ভুনাথ মুখোপাধ্যায়। শম্ভুনাথকে একেবারেই পছন্দ করতে না সুচিত্রা দেবী। আর তাছাড়াও কেউ বিনা অনুমতিতে ছবি তুলুক এতে তিনি খুব রেগে যেতেন। কিন্তু কে কার কথা শোনে? আর সামনে যদি থাকেন সুচিত্রা সেন কেউই কি সুযোগ ছাড়ে?

একে মা মনসা তায় আবার ধূনার গন্ধ! শম্ভুনাথ অনুমতি না নিয়েই সুচিত্রার ছবি তুলতে শুরু করেন, যা সুচিত্রার অপছন্দ ছিল। এতে সুচিত্রা রেগে গিয়ে শম্ভুনাথকে কড়া ভাষায় তিরস্কার করেন এবং তাঁর তোলা ছবিগুলি নষ্ট করতে বলেন। এই ঘটনায় উত্তম কুমার তীব্র বিরক্ত হন এবং প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকেন। সুযোগ পেতেই একদিন তিনি পরিচালক অগ্রদূতকে বলেন যে, বাইরের লোকজন ফ্লোরে থাকলে তিনি শুটিং করবেন না।
এই মন্তব্যের ফলে দিবানাথ সেন ফ্লোর ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন। স্বামীর প্রতি এমন আচরণে সুচিত্রা সেন অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন, সে যতই স্বামীর সাথে স্বাভাবিক সস্পর্ক নাই থাকুক এবং পরদিনই কলকাতায় ফিরে আসেন। তিনি মনস্থির করে ফেলেন যে আর ছবি করবেন না মহানায়কের সাথে! তিনি ঘোষণা করেন যে, তিনি ছবিটি আর করবেন না। এই ঘটনার ফলে ‘পথে হলো দেরি’ ছবির শুটিং প্রায় দুই মাস বন্ধ থাকে।
আরও পড়ুনঃ ‘কী আছে এর মধ্যে যে মেয়েরা টপাটপ প্রেমে পড়ে?’ দিয়ে, সুরভিকে ছেড়ে শার্লির সঙ্গে প্রেম করে কটাক্ষের শিকার অভিষেক!
পরিচালক অগ্রদূত ও অন্যান্যদের বহু প্রচেষ্টায় সুচিত্রা সেনকে রাজি করানো হয় শুটিংয়ে ফিরে আসতে। অবশেষে ছবির কাজ সম্পন্ন হয় এবং মুক্তির পর এটি কালজয়ী একটি ছবি হয়ে ওঠে। দর্শকদের মধ্যে বিপুল সাড়া ফেলে আর আজও জনপ্রিয়তা এক চুলও কমেনি। এই ঘটনা থেকে বোঝা যায়, উত্তম কুমার ও সুচিত্রা সেনের পেশাদার সম্পর্কের পাশাপাশি ব্যক্তিগত পর্যায়েও নানা জটিলতা ও ইগোর সংঘাত ছিল।
তবে তাঁদের পেশাদারিত্বের কারণে তাঁরা সেই সমস্ত বাধা অতিক্রম করে বাংলা চলচ্চিত্রে একের পর এক সাফল্য এনে দিয়েছেন। এই ধরনের ঘটনা সত্ত্বেও, উত্তম-সুচিত্রা জুটি বাংলা চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মনে আজও অমলিন। তাঁদের পর্দার রসায়ন ও অভিনয় দক্ষতা আজও দর্শকদের মুগ্ধ করে এবং ভবিষ্যতেও করবে।