দত্তক নেওয়ার সিদ্ধান্ত কারও কাছে সহজ নয়। সমাজের নানা কটাক্ষ, নিজস্ব মানসিক চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে তবেই সেই পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব। কিন্তু একজন মা হয়ে যে কারও কাছে শুধু নিজের ভালোবাসা বিলিয়ে দেওয়া যায়, তা যেন আরও একবার প্রমাণ করলেন জনপ্রিয় গায়িকা জোজো। জীবনের অর্ধশতক পেরিয়েও তিনি নিজের পরিবারে নতুন সদস্যকে জায়গা করে দিয়ে মাতৃত্বের এক অন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁর জীবন যেন এক নতুন চ্যালেঞ্জের আয়না, যা আজ আরও অনেককে উৎসাহ জোগাতে পারে।
২০১৯ সালে মাত্র কয়েক মাস বয়সি এক শিশুকে নিজের ঘরে এনে শুরু হয় জোজোর নতুন যাত্রা। ফুটফুটে সেই ছেলেটি আজ সবার প্রিয় আদি (আদীপ্ত)। কলকাতার টিউলিপিয়ান্স প্রাইভেট স্কুলে পড়াশোনা করছে আদি। জানা যায়, এখানে নতুন ভর্তি হতে প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ হয় এবং প্রতিমাসে প্রায় ৫ হাজার টাকা করে খরচ রয়েছে। গায়িকা হিসেবে জোজো আজও জনপ্রিয়, কিন্তু মায়ের ভূমিকায় তিনি যেন আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন।
কিন্তু আদি আসার পর জোজোর জীবনে চ্যালেঞ্জের শেষ ছিল না। একটি শিশুকে নিজের জীবনে এনে তাকে মাতৃস্নেহে বড় করা সহজ ছিল না। তিনি এক সাক্ষাৎকারে জানান, প্রথম কয়েক মাস ছিল অত্যন্ত কঠিন। আদি তখন নতুন পরিবেশে অভ্যস্ত হতে পারেনি। সারারাত কেঁদে থাকত, আধঘণ্টা অন্তর খিদে পেত। সব দায়িত্ব নিজের হাতে সামলেছেন জোজো। রাতের পর রাত জেগে সন্তানের পাশে থেকে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে তিনিই আদিন জন্য একমাত্র আশ্রয়।
তবে আদি নিয়ে সমাজের কটূক্তি থেকে মুক্তি পাননি তিনি। ছেলের গায়ের রং নিয়েও কটাক্ষের শিকার হতে হয়েছে। কিন্তু মা হিসেবে তার জবাব ছিল সাফ, ‘এই ধরনের কথা বললে জিভ টেনে ছিঁড়ে নেব।’ জোজো স্পষ্ট করেন, তাঁর সন্তানের প্রতি ভালোবাসার সঙ্গে এইসব কটাক্ষের কোনও সম্পর্ক নেই। তাঁর পরিবারের সবাই দত্তকের এই সিদ্ধান্তকে আন্তরিকভাবে মেনে নিয়েছে। বড় মেয়ে বাজোও ছোট ভাইকে সমান ভালোবাসায় আগলে রেখেছে।
আরও পড়ুনঃ শালিনীকে ঘোল খাওয়ালো ফুলকি! ডাক্তারের সঙ্গে প্ল্যান করে ফুলকির চোখ নষ্ট করে দেওয়ার ছক কষলো রুদ্র!
নিজের জীবনের নানা অধ্যায় নিয়ে গায়িকা বলেন, ‘আমার মেয়ের জন্য আমি সবসময় থেকেছি। কিন্তু ছেলেকে আমি নিজে হাতে বড় করছি। সম্পত্তি ভাগাভাগি নিয়েও কোনও সমস্যা হবে না। আমার মেয়ে ওর বাবার সম্পত্তি পাবে, আর আদি যাতে কারও কাছে হাত না পাতে, সেটাও নিশ্চিত করব।’ এভাবেই জোজো নিজের মাতৃত্বের গল্পকে শুধু বিশেষ করে তোলেননি, বহু মায়ের কাছে এক দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন।