সিনেমা হোক বা ধারাবাহিক বা রঙ্গমঞ্চ তার অভিনয় সর্বত্র মন জয় করেছে দর্শকদের। খলচরিত্র হলেও তার অভিনীত প্রতিটি চরিত্রই আজও একইভাবে দাগ কেটে যায় দর্শকদের মনে। সংসার সুখের হয় রমনীর গুণে, রাখি বন্ধন, মিঠাই, কিরণমালা, খড়কুটো, কপালকুণ্ডলা, কনক কাঁকন, ভুতু, বেদের মেখে জোৎস্না, গুড্ডি সহ একাধিক ধারাবাহিকে অভিনয় করেছে অভিনেত্রী চৈতালী চক্রবর্তী। তবে শুধু ছোটপর্দাতেই নয়, বড়পর্দাতেই নিজের অভিনয়ের ছাপ ফেলেছেন তিনি। মেজ দিদি, বনফুল, অনন্যা শারদীয়া সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী চৈতালী চক্রবর্তী।
মায়ের গর্ভে থেকেই স্বাদ পেয়েছিলেন অভিনয়ের, জানালেন অভিনেত্রী চৈতালী চক্রবর্তী
সম্প্রতি অভিনেত্রী উপস্থিত হয়েছিলেন ইউটিউবের অতি জনপ্রিয় চ্যানেল জোশ টকসে। সেখানেই নিজের জীবন নিয়ে অজানা নানা কাহিনী তুলে ধরেছেন অভিনেত্রী। অভিনেত্রী দৃষ্টিতে তাঁর জীবন হল অভিনয়। অভিনেত্রীর মায়ের নাম ছিল শেলী পাল নান্দীকারের একজন বিশিষ্ট অভিনেত্রী। অভিমন্যুর মতো মা’তৃজঠরে থাকাতেই তাই মঞ্চের স্বাদ পেয়েছিলেন অভিনেত্রী। অভিনেত্রীর ছোটবেলা কেটেছে অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে। পরিবারের সকলেই যুক্ত ছিলেন অভিনয়ের জগতের সঙ্গে। ফলেই লাইটস ক্যামেরা অ্যাকশনের সঙ্গে শুরু থেকেই পরিচিত ছিলেন তিনি। সেইখান থেকেই অভিনেত্রী হওয়ার আশা জেগেছিল তাঁর মনে।
৫টা বছর বসে ছিলেন নাট্যদল কিন্তু কাজ সুযোগ দেয়নি কেউ, অভিনয় জীবন নিয়ে কি বললেন চৈতালী চক্রবর্তী
যদিও একেবারেই সহজ ছিল না তাঁর অভিনয় জীবন। ক্লাস ১২ এ বাবার হাত ধরেই শাঁওলি মিত্রের দল ‘পঞ্চম বৈদিক’এর সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। কিন্তু পাঁচবছর সেখানে থেকে অভিনয়ের সুযোগ পাননি চৈতালী। অভিনেত্রী নিজের স্মৃতিচারণ করে বলেছেন “১৭ বছরের ওইটুকু মেয়ের ইমোশানটা কেউ বোঝেনি। কিন্তু আমার মনে জেদ চেপে গিয়েছিল আমি অভিনেত্রী হিসেবেই নিজেকে দেখব।“ পরবর্তী সময়ে তিনি নাটক নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন রবীন্দ্রভারতী থেকে। তবে সেখানেও ফুটন্ত কড়াই থেকে তিনি গিয়ে পড়েছিলেন গরম চাটুতে।
সন্তানসম্ভবা হওয়ার কারণে বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের সঙ্গে সিনেমার সুযোগ হারিয়েছেন চৈতালী
নানা কটূক্তি বঞ্চনা এমনকি “রাক্ষসী” শব্দটাও সহ্য করতে হয়েছিল তাকে কিন্তু তবুও হাল ছাড়েননি তিনি। অজিতেশ নাট্য একাডেমীর তিন পয়সার পালা নাটকে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন তিনি। তারপর অশোক মুখোপাধ্যায়ের একা এবং একা নাটকে অভিনয় করে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। তারপরই ভাগ্যচক্রে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। অভিনেত্রীর অভিনয় দেখে বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত মতো পরিচালক তাঁকে সুযোগ দিয়েছিলেন অভিনয়ের কিন্তু অ’ন্তঃস’ত্ত্বা হওয়ার কারণে সেই অফার ফিরিয়ে দান অভিনেত্রী। বড় হয়ে তাঁর মেয়েও তাঁকে বলেছিল “তুমি আমায় গ’র্ভে’ই মে’রে ফে’ল’তে আমার তাঁকে কিছু যেত আসত না।“ কিন্তু তিনি অভিনয়কে সরিয়ে রেখে মাতৃত্বকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ পুরুষোত্তমকে বোকা বানিয়ে অষ্টমীকে সাহায্য করলেন ঠাম্মি! তবে কী অষ্টমীর বানানো ধুপ দিয়েই পুজো হবে বৌরাণীর?
তারপর আর তিনি অভিনয় করতে পারেননি বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের সিনেমায়। তবে মাতৃভূমি, কিরণমালায় তাঁর অভিনয় তার জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে দিয়েছিল বাংলার ঘরে ঘরে। তারই মধ্যে ভেঙে যায় অভিনেত্রীর সংসার। মেয়ে শ্বশুরবাড়িতে রেখে চলে আসতে হয়েছিল তাঁকে। তবে আশাহত হননি কখনও। বর্তমানে নিজের টাকায় তিনি কিনেছেন গাড়ি, ফ্ল্যাট। ব্যক্তিগত জীবনের নানা টানাপোড়ন কাটিয়ে নিজের আত্মবিশ্বাসের জোরেই তিনি এগিয়ে গেছেন সামনে, ভেদ করেছেন নিজের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য।