পুজোর সময়ে টলিপাড়ার তারকাদের আড্ডার অন্যতম কেন্দ্র চ্যাটার্জি পরিবারের দুর্গাপুজো (Durga Puja), যেখানে উৎসবের জৌলুস আর আন্তরিকতা মিলেমিশে এক আলাদা পরিবেশ তৈরি করে। সুদীপা চট্টোপাধ্যায়ের (Sudipa Chatterjee) হাতের আতিথেয়তা এতটাই মন ছুঁয়ে যায় যে, অতিথির তালিকায় শুধু বাংলা ছবির অভিনেতা-পরিচালক নন, থাকেন বলিউড ও রাজনৈতিক জগতের পরিচিত মুখেরাও। চার দিন ধরে সেই বাড়িতে যেন এক অন্যরকম প্রাণচাঞ্চল্য দেখা যায়। তবে এই পুজো শুধুই গ্ল্যামার নয়, এর পেছনে রয়েছে একটি গভীর পারিবারিক ইতিহাস ও ঐতিহ্য।
এই পুজোর শুরু হয় বাংলাদেশে, ঢাকার বিক্রমপুরে অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায়ের আদি বাড়িতে। সময়ের পরিবর্তনে সেই পুজো এসে পৌঁছেছে কলকাতার এক ব্যস্ত অঞ্চলে, যেখানে সুদীপা বিয়ের পর নতুন করে প্রাণ ফেরান পারিবারিক এই উৎসবে। সুদীপার ঠাকুর দালানে মহাধুমধামে উমার আগমন ঘটে, সোনার গয়নায় সজ্জিত হয়ে। মায়ের মাথার মুকুট থেকে শুরু করে পা পর্যন্ত প্রতিটি অলংকারই খাঁটি সোনায় গড়া। বিপরীতে, দেবীর হাতে থাকা সব অস্ত্র—যেমন ত্রিশূল, খড়গ, চক্র—তৈরি হয় বিশুদ্ধ রূপো দিয়ে।
এক হাতে থাকে ত্রিশূল, আর আরেক হাতে থাকে শান্তির প্রতীক পদ্মফুল। সুদীপার পুজোর কিছু নিজস্ব নিয়ম রীতিও আছে, যা অনেকের চোখে কৌতূহলের তো কারণ, আবার কারও কাছে সমালোচনারও বিষয়। নবমীর দিন দেবী দুর্গাকে পাঁঠার মাংস ও মাছ দিয়ে ভোগ দেওয়ার প্রথা অনেকেই সহজভাবে নিতে পারেন না, তবে চ্যাটার্জি পরিবারে এই নিয়ম বহু বছরের। প্রতিদিন দেবীকে ভোগ দেওয়া হয় ভিন্ন ভিন্ন ধরনের চাল দিয়ে রান্না করা খাবারে।
এই চাল আসে ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে, এমনকি ওপার বাংলার, অর্থাৎ বাংলাদেশের বাড়ি থেকেও চাল আসে দেবীর ভোগে ব্যবহারের জন্য। এদিন সুদীপা এক সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন তার বাড়ির দুর্গাপুজোর মাহাত্ম্য এবং অলৌকিক অভিজ্ঞতার কথা। সুদীপা প্রথমেই বলেন,”খুবই জাগ্রত আমাদের মা। এখানে পুজোর চারটে দিন কোনও ভেদাভেদ হতে দেন না তিনি। এখানে শতরূপ আর দেবাংশু পর্যন্ত একই থালায় ভোগ খায়। অনেকেই আসেন শুধু মায়ের টানে।
এই আমাদের মাও নিজের উপস্থিতি ঠিক জানান দেন। প্রতিবারের মতো এবারও পঞ্চমীতে মাকে গয়না পড়াতে গিয়ে টিকলি পাওয়া যাচ্ছিল না। ভেবেছিলাম মাকে গয়না গড়িয়ে দেব না এবার, বাধ্য হয়ে রাতারাতি টিকলি কিনতে হল। পরে দেখা গেল পুরনো টিকলিটিও আছে। ফল এবার মা নিজের গয়না নিজেই করিয়ে নিয়েছেন, একসঙ্গে দুটো টিকলি পড়েছেন। আমাদের বাড়ির মা চিরাচরিত দুর্গা প্রতিমার মতো নন। তিনি রনংদেহি মূর্তিতে থাকেন। ওনার গয়নার দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, সমস্ত কিছুই যুদ্ধের সাজ।
আরও পড়ুনঃ বিয়ের আসরে ফাঁস ঘনিষ্ঠ ভিডিও, সবশেষে ভালোবাসার লড়াই জিতে নিল আর্য-অপর্ণা! উচিৎ শিক্ষা পেল হিন্দোল! হিন্দোলের মা ক্ষেপে আগুন, অপর্ণাকে প্রতারণার অভিযোগে তুলোধোনা!
এক হাতে তিনি যেমন ত্রিশূল ধরেছেন অন্য হাতে পদ্ম ফুল। সতর্কতা আর শান্তির বাণী দিচ্ছেন। এই প্রতিমা আমাদের বাড়ি ছাড়া একমাত্র জোড়াসাঁখোর দাঁ বাড়িতেই দেখা যায়। এই পুজো মূলত দেড়শ বছরের পুরনো। কোন নির্দিষ্ট সালের হিসেব না পাওয়া গেলেও মায়ের গলায় মুক্ত দিয়ে গড়ানো সোনার ময়ূর লাগানো যে গয়না রয়েছে, ওটার বয়সী আনুমানিক ১৪৫ বছর। ব্রিটিশ কারিগরের হাতে তৈরি, এই গয়না আজকেও তৈরি করতে পারবে না।” চোখের পলকেই আজ দশমী, তাই মাকে বিদায় জানাতে সুদিপার চোখেও অশ্রুধারা।