টেলিভিশনের পর্দায় এমন কিছু মুখ থাকে যাদের দেখা না গেলে দর্শকের মনে খালি খালি লাগে। যাঁদের চোখে-মুখে, শরীরী অভিব্যক্তিতে লুকিয়ে থাকে এক আলাদা ছন্দ, এক আলাদা শক্তি। তেমনই এক পরিচিত মুখ তনিমা সেন। কখনও কড়া শাশুড়ি, কখনও আদর্শ মা, আবার কখনও হাস্যরসাত্মক চরিত্রে সাবলীল তিনি। টেলিভিশনের নিয়মিত দর্শকরা তাঁর অভিনয়ে অভ্যস্ত। কিন্তু হঠাৎ করেই যেন পর্দা থেকে হারিয়ে গিয়েছেন তিনি।
অভিনয় শুধু পেশা নয়, একজন অভিনেতার অস্তিত্বও বটে। দীর্ঘদিন টেলিভিশনের সঙ্গে যুক্ত থাকার পর হঠাৎ করে কাজ বন্ধ হয়ে গেলে একটা মানসিক চাপ এসে পড়ে। তনিমা সেনের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই হয়েছে। যিনি এতদিন ধরে ধারাবাহিকে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করে গিয়েছেন, এখন সেই অভিনেত্রী কাজহীন। অথচ কোনও বিদায়ী পোস্ট, বিদায় বেলায় আবেগঘন বার্তা, কিছুই নেই। বরং এক অজানা নীরবতা ঘিরে ধরেছে তাঁকে।
একাধিক জনপ্রিয় ধারাবাহিকে কাজ করছিলেন তনিমা সেন। স্টার জলসায় ‘উড়ান’ ও ‘তেঁতুলপাতা’ সিরিয়ালে নিয়মিত দেখা যেত তাঁকে। কিন্তু আচমকাই বাদ পড়েছেন দুই ধারাবাহিক থেকেই। কোনও রকম ব্যাখ্যা ছাড়াই এই বাদ পড়া, যা নিয়ে তিনিও অবাক। তাঁর কথায়, “হয়তো আমার স্পষ্ট কথা বলার অভ্যাসটাই কাল হল।” তিনি জানান, “আজও দর্শক আমাকে ভালোবাসেন। অনেকেই জানতে চান কেন আর দেখা যাচ্ছে না পর্দায়। প্রায় সাত-আট মাস হয়ে গেল, কোনও কাজ নেই। সত্যিই জানি না, কেন এমন ঘটল।”
অভিনয় বন্ধ থাকায় শুধু মানসিক নয়, শারীরিক ভাবেও বিপর্যস্ত তনিমা। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের যত্ন নেওয়াটা জরুরি হয়ে দাঁড়ায়। তনিমা জানান, “পায়ে মাঝে মাঝে ব্যথা হয়। ডাক্তার হাঁটতে বলেন। কিন্তু আমি পারি না। কাজ থাকলে এমনিতেই হাঁটাচলা হতো।” তবে মেয়ের ও নাতির ভালোবাসায় মন খানিকটা শান্ত হয় তাঁর। তিনি বলেন, “আমরা একসঙ্গে খাই। ওরা একমুঠো খেলেও জানি আমাকেও দেবে। কিন্তু এই বয়সে হঠাৎ বসে যাওয়া মানসিকভাবে খুব চাপ দেয়।”
আরও পড়ুনঃ প্রমাণ চাই ছোট রানীর, ডিএনএ টেস্টের প্রস্তাব রুদ্রর! ছোট রানীর সামনে খুলে গেল ফুলকির জন্মরহস্য! মরণফাঁদে ফুলকি! ঘুমের মধ্যেই খু’নের চেষ্টা রুদ্রর!
তনিমা জানালেন, মুম্বই থেকেও বহুবার ডাক পেয়েছেন। কিন্তু বয়স ও মানসিকতা—এই দুই কারণেই এত দূরে গিয়ে কাজ করতে পারেন না। তবে থেমে যাওয়ার নামই না তাঁর অভিধানে। তাই ইউটিউব চ্যানেলে অঙ্কনশিল্পীদের নিয়ে কিছু কাজের পরিকল্পনা করছেন। বলছেন, “বড় শিল্পীদের তো সবাই ডাকে। আমি বলব তাঁদের কথা, যারা আলো থেকে দূরে।” তাঁর সংযোজন, “আমি বিশ্বাস করি, আমার এখনও বাজারে দাম আছে, তাই অনেকেই আমায় পাত্তা না দিয়ে থাকতে পারেন না। এটাও তো বড় কথা, তাই না?”