২৬ শে জানুয়ারি ২০১৮, সুপ্রিয়া দেবীর প্রয়াণের দিনই প্রয়াত হয়েছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের আরও এক জনপ্রিয় অভিনেতা। তিনি ছিলেন বাংলা স্বর্ণযুগের খলনায়ক শম্ভু ভট্টাচার্য। বাংলা সিনেমায় চরিত্রাভিনেতা হিসেবেই খ্যাতি অর্জন করেছিলেন শম্ভু ভট্টাচার্য। বিশেষ করে খলনায়কের ভূমিকায় তাঁর অভিনয় চমকে দিয়েছিল বাঙালি দর্শকদের।
সিনেমা, থিয়েটার, মঞ্চ সর্বত্রই দাপিয়ে অভিনয় করেছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রে খলনায়ক হিসেবে নজির গড়া শম্ভু ভট্টাচার্য। যদিও ২০০৩ সালে তিনি শেষবারের মতো ‘চুড়িওয়ালা’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তারপর আর অভিনয় করতে পারেননি। তপন সিংহ, অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়, পীযূষ বসু, শক্তি সামন্ত, মৃণাল সেন প্রমুখ পরিচালকদের ছবিতে অভিনয় করেছেন এই গুনী অভিনেতা।
হিন্দি-বাংলা মিলিয়ে দেড়শোরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন শম্ভু ভট্টাচার্য। বাংলা চলচ্চিত্রে সেই যুগের সমস্ত জনপ্রিয় নায়ক-নায়িকা সঙ্গে অভিনয় করেছেন তিনি। ‘সন্ন্যাসী রাজা’, ‘অমানুষ’, ‘চারমূর্তি’, ‘গুপী বাঘা ফিরে এল’, ধনরাজ তামাং’, ‘অগ্নিশ্বর’, ‘মর্জিনা আবদাল্লা’, ‘গোলাপ বউ’, -এর মতো জনপ্রিয় সব সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। আর শুধু চলচ্চিত্র দুনিয়ায় নয়, মঞ্চেও দাপট দেখিয়েছেন এই অভিনেতা। রবি ঘোষ, জহর রায় প্রমুখের সঙ্গে মঞ্চে অভিনয় করেছেন তিনি।
জানা যায়, উৎপল দত্তের সঙ্গে বহু নাটকেও তিনি দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন। যদিও বলা হয়ে থাকে যতটা প্রতিভাবান তিনি ছিলেন তাঁর প্রতিভা কোনদিনই সেই ততটা কদর বা গুরুত্ব পায়নি। টলিউড কোনদিনই এই অভিনেতাকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান দেয়নি এমনটাই বলেছিলেন শম্ভু ভট্টাচার্যের পরিবার।
জানা যায় কোনদিনই নিজের কাজের জন্য তদ্বির করেননি অভিনেতা শম্ভু ভট্টাচার্য। তিনি খুবই চাপা স্বভাবের ছিলেন। আর তাই তিনি ইন্ডাস্ট্রির কারও সঙ্গেই কখনও নিজে থেকে যোগাযোগ করেননি। আর তাই অসম্ভব প্রতিভাবান শিল্পী হয়েও তার শিল্প কোনদিনই সেই অর্থে বিরাট ভাবে বিকশিত হয়নি।
যদিও শেষ জীবনে বেশ কষ্ট পেয়েছিলেন অভিনেতা। শ্বাস কষ্ট জনিত সমস্যার জন্য দীর্ঘদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩। না টলিউডের মানুষদের ভিড় সেই অর্থে তাঁর মৃত্যুতে দেখা যায়নি। বলা যায় অনেকাংশই উপেক্ষিত ছিলেন তিনি। ‘সন্ন্যাসী রাজা’র রানী মার মৃত্যু দিনেই তাঁর সঙ্গেই পরলোক গমন করেন রাজবাড়ির লাঠিয়ালের ভূমিকায় অভিনয় করা অভিনেতা শম্ভু ভট্টাচার্য।