জয়েন গ্রুপ

বাংলা সিরিয়াল

এই মুহূর্তে

“পার্টি না দিলে, মদ না খাওয়ালে ফেমাস হওয়া যায় না!” আমার রূপ দেখে কেঁদে ফেলেছিলেন শাশুড়ি মা! ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অকপট পর্দা কাঁপানো খলনায়িকা অনামিকা সাহা!

টলিউডের বর্ষীয়ান অভিনেত্রী অনামিকা সাহা (Anamika Saha) আজও সমানভাবে জনপ্রিয়। খলনায়িকা থেকে স্নেহশীল মায়ের চরিত্রে নিজেকে মেলে ধরেছেন তিনি। কিন্তু এই পথচলা সহজ ছিল না। ছোটবেলা থেকেই অভিনয় করার ইচ্ছে থাকলেও তাঁকে শুনতে হয়েছে কটাক্ষ, বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি থেকে নিষেধাজ্ঞা আসায় ছয় বছর অভিনয় বন্ধ ছিল। অবশেষে ফের অভিনয়ে ফিরে আসেন, আর তখন থেকেই একের পর এক ব্লকবাস্টার ছবিতে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেছেন।

৪৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে রূপোলি পর্দায় অভিনয় করে গেছেন তিনি, তবে এই সফর মোটেও সহজ ছিল না। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে জীবনের নানা চড়াই-উৎরাই নিয়ে মুখ খুললেন তিনি। জানালেন, ব্যক্তিগত জীবন থেকে অভিনয় জগতে প্রবেশ, সব ক্ষেত্রেই তাঁকে লড়াই করতে হয়েছে। নিজের রূপ নিয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বরাবরই সচেতন ছিলেন অনামিকা। তিনি বলেন, “আমার স্বামী অত্যন্ত সুদর্শন ছিলেন, আর আমি তুলনামূলকভাবে অনেকটাই শ্যামলা। তাই সারা জীবন এই নিয়ে একটা দম্ভের লড়াই চলেছে। এমনকি, বিয়ের সময় যখন শ্বশুরবাড়ির লোকেরা প্রথমবার আমাকে দেখতে আসে, তখন শাশুড়ি মা কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন!”

image 63

কিন্তু সৌন্দর্যের এই প্রচলিত ধারণা তাঁর প্রতিভাকে আটকে রাখতে পারেনি। রূপ নেই বলে ইন্ডাস্ট্রিতেও তাঁকে কম শুনতে হয়নি। যখন ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’ ছবির জন্য তিনি নির্বাচিত হন, তখন অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন পরিচালকের সিদ্ধান্ত নিয়ে। কারণ, যে হিন্দি ছবিতে এই চরিত্রে ছিলেন হেমা মালিনী, সেখানে বাংলা রিমেকে অনামিকা সাহা? অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। কিন্তু প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় (Prosenjit Chatterjee) সবসময় তাঁকে সমর্থন করেছেন। আর যখন সিনেমাটি মুক্তি পায়, তখন সেই সমালোচকরা প্রশংসায় ভরিয়ে দেন তাঁকে। তবে অভিনয়ে ফেরাটা সহজ ছিল না। মেয়ে হওয়ার পর অভিনয় ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন।

কিন্তু অভিনেতা চিরঞ্জিত চক্রবর্তীর পরামর্শে আবার ফিরলেন পর্দায়। তখন তিনি জানতেন, নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করলে ঘনিষ্ঠ দৃশ্য, রোম্যান্স করতে হবে, যা তাঁর পরিবার মেনে নেবে না। তাই তিনি মা, মাসি, ঠাকুমার চরিত্রে অভিনয়ের সিদ্ধান্ত নেন। অভিনেতা চিরঞ্জিত চক্রবর্তী (Chiranjit Chakraborty) তাঁকে পরামর্শ দেন, “পান্তাভাত খেয়ে মুখটা খাটের ধারে ঝুলিয়ে শোবে, দেখবি গালে মাংস চলে আসবে!” সেই পরামর্শ শুনেই তিনি ওজন বাড়ানো শুরু করেন, আর এর ফলেই পরিচালকরা তাঁকে মা চরিত্রে নিতে শুরু করেন। এরপরই এল ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’-র অফার, আর সেই সিনেমার সাফল্যের পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। অভিনয়জীবনে অনেক চড়াই-উতরাই এসেছে।

একসময় সন্ধ্যা রায়ের হাতে মার খেয়েছেন, আবার মিডিয়া তাঁকে একঘরে করেছিল। যাঁরা বলতেন, “পার্টি না দিলে, মদ না খাওয়ালে এই ইন্ডাস্ট্রিতে ফেমাস হওয়া যায় না,” তাঁরাই একদিন তাঁর ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। উত্তম কুমারের সঙ্গে অভিনয়ের ইচ্ছে থাকলেও তা পূরণ হয়নি, তবে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের (Soumitra Chatterjee) স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন। এমনকি এক দৃশ্যে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে জড়িয়ে ধরার পর তিনি ছাড়তেই চাননি! যখন সৌমিত্র জিজ্ঞাসা করলেন, “কেন এখনো ধরেই আছো?” তখন অনামিকা উত্তরে বলেছিলেন, “এই বুকে এত কিংবদন্তি নায়িকারা মাথা রেখেছেন, আমি শুধু জানতে চাইলাম, সেখানে আসলে কী আছে!”

আজও সেই অতীত মনে রেখেছেন তিনি। অভিনয়ের নেশা আজও ছাড়েননি। আজও অতীতের স্মৃতি যেন তাঁর জীবনের অঙ্গ। যখন জিজ্ঞেস করা হয়, আবার কবে তাঁকে পর্দায় দেখা যাবে, তখন তিনি জানান, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় (Shiboprosad Mukherjee) পরিচালিত আসন্ন সিনেমা ‘ভানুমতির ভূতের হোটেল’-এ তাঁকে দেখা যাবে ভূতের চরিত্রে। কালিম্পংয়ে ইতিমধ্যেই ছবির শুটিং শুরু হয়েছে। জীবনজুড়ে নানা ওঠাপড়ার পরেও অভিনয়ের প্রতি তাঁর ভালোবাসা যে এতটুকুও কমেনি, তা তাঁর কথা থেকেই স্পষ্ট! অনামিকা সাহা প্রমাণ করেছেন, শুধুমাত্র রূপ নয়, প্রতিভাই একজন শিল্পীর আসল পরিচয়।

Piya Chanda