জয়েন গ্রুপ

বাংলা সিরিয়াল

এই মুহূর্তে

“আমাকে মারতে বি’ষ খাইয়ে দেওয়া হয়েছিল!” — খাবারে বি’ষ মেশানোর অভিযোগ তুলে স্তব্ধ করলেন আরতি মুখোপাধ্যায়! সুরের জগতে ঈর্ষার এমন নিদর্শন বিরল! বিষ’ক্রিয়ার পরিণতি আজও বয়ে চলেছেন কিংবদন্তি গায়িকা!

বাংলা গানের স্বর্ণযুগের উজ্জ্বলতম তারকাদের মধ্যে একটি নাম চিরকাল শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হবে— ‘আরতি মুখোপাধ্যায়’ (Aarti Mukherji)। তাঁর কণ্ঠে যে আবেগ, যে সারল্য, তা একাধিক প্রজন্মকে ছুঁয়ে গেছে। হেমন্ত, মান্না, সন্ধ্যা, শ্যামল, সতীনাথের মতো মহারথীদের পাশে তিনি সমান মর্যাদা নিয়ে দাঁড়িয়েছেন, এবং প্রায় পাঁচ দশক ধরে বাঙালি শ্রোতাদের মনে গভীর দাগ কেটে গেছেন। তাঁর গানে ছিল এক অদ্ভুত সম্মোহনী শক্তি, যা শুধু গান শুনিয়ে নয়, জীবনের নানা ওঠাপড়ার গল্প বলেও মানুষের মনে থেকে যায়।

ঢাকায় জন্ম আর কলকাতায় বড় হওয়া এই শিল্পী ছোট থেকেই সাংস্কৃতিক আবহে বেড়ে উঠেছেন। বাবার অকালপ্রয়াণ আর মায়ের অনুপ্রেরণায় গান ছিল তাঁর আশ্রয়। সুশীল ব্যানার্জি থেকে শুরু করে পণ্ডিত চিন্ময় লাহিড়ীর মতো দিগ্বিজয়ী শিক্ষকের কাছে শাস্ত্রীয় সংগীতে তালিম নেওয়া আরতির কণ্ঠ ধীরে ধীরে প্রস্তুত হতে থাকে জীবনের কঠিনতম পরীক্ষার জন্য। অল ইন্ডিয়া মিউজিক ট্যালেন্ট-এ অংশগ্রহণ, তারপর ‘সাহারা’ সিনেমায় প্রথম সুযোগ—এইভাবেই তাঁর সফর শুরু।

বাংলা ছবির জগতে ‘কন্যা’ সিনেমা দিয়ে পা রাখেন তিনি, আর তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তাঁর গানের ব্যাপ্তি ছিল অসাধারণ। ঠুমরি, গজল, টপ্পা, ভজন, সব ধরনের গানেই সাবলীলভাবে পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। তবু জনপ্রিয়তার এই বিস্তার অনেক সময়ই অন্য শিল্পীদের কাছে ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আরতির বিরুদ্ধে একাধিকবার গোপন ষড়যন্ত্র হয়েছে। এমনকি একবার বিষ’ক্রিয়ার শিকারও হতে হয় তাঁকে, যার ধাক্কা আজও শরীরে বহন করেন তিনি। গায়িকার কথায়,”হঠাৎ করেই শরীরে অস্বস্তি বোধ হতে থাকে, পা ফুলে যায়।

হাসপাতালে গেলে ডাক্তার জানান, খাবারে বি’ষ থেকে হয়েছে। আজও জানা নেই, কে আমায় মারতে চেয়েছিল?” সেই ঘটনার যন্ত্রণা আর অন্ধকারের মধ্যেও নিজের অবস্থান দৃঢ়ভাবে ধরে রেখেছিলেন এই লড়াকু নারী। ব্যক্তিগত জীবনেও শান্তি ছিল না। গীতিকার সুবীর হাজরার সঙ্গে সম্পর্ক শুরু হয়েছিল প্রেম দিয়ে, কিন্তু সেই সম্পর্ক পরিণতি পায় এক দমবন্ধ পরিস্থিতিতে। বিয়ের পরই বুঝতে পারেন, এই সম্পর্ক তাঁকে কেবল নিয়ন্ত্রণ করছে, তাঁর সত্তাকে দমিয়ে দিচ্ছে। সাহস করে সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি।

তারপর একা পথ চলা শুরু করেন আরতি। বম্বেতে যান, এবং নিজের নতুন পরিচিতি গড়ে তোলেন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, সংগীতজগতের রাজনীতিতে ক্লান্ত হয়ে পেশাদার জীবন থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। আজ তিনি আছেন মুম্বাইয়ে, ছেলে সোহমের সঙ্গে। সোহম নিজেও এখন এক প্রতিভাবান সংগীতশিল্পী। গান আজও আরতির জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, তবে এখন নিভৃতে এবং নিরবে চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁর সুরের সাধনা। রূপালি পর্দার ঝলকে নয়, বরং একাগ্রতায়, আত্মিক আনন্দেই আজ খুঁজে পাচ্ছেন নিজের শান্তি।

Piya Chanda