দীপাবলি আর কালীপুজো—আলো আর আনন্দের উৎসব। কিন্তু সেই আলো ঢেকে গেল শব্দবাজির দাপটে। মঙ্গলবার রাত থেকেই গোটা কলকাতা আর আশপাশের এলাকা কেঁপে উঠল আতশবাজির বিকট আওয়াজে। সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদে সরব হয়েছেন অভিনেত্রী ঋতাভরী চক্রবর্তীর মা, অভিনেত্রী শতরূপা সান্যাল। নিজের বাড়ির চারপাশের ভয়ঙ্কর শব্দ দূষণের ভিডিও পোস্ট করে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “আমরা কি এতটাই অসহায় হয়ে গেছি অসভ্যতা আর স্বার্থপরতার সামনে?”
শতরূপা সল্টলেকে নিজের বাড়ির বারান্দা থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। মাত্র ৩০ সেকেন্ডের সেই ক্লিপেই ধরা পড়েছে কান ফাটানো বাজির আওয়াজ। সঙ্গে তিনি লিখেছেন, “এখন রাত সাড়ে এগারোটা। এই ৩০ সেকেন্ডই যথেষ্ট আমাদের নাগরিক সচেতনতার স্তর বোঝার জন্য। বিকেল থেকে শুরু হয়েছে এই বীভৎস শব্দবাজির উৎপাত। থানাও বেশি দূরে নয়, অথচ কেউ কিছু করছে না।” তাঁর পোস্টে ঝরে পড়েছে এক অসহায় ক্ষোভ—যেখানে শিক্ষিত, সম্পন্ন মানুষদের এলাকা বলেও আইন মানার বালাই নেই।
প্রশ্ন তুলেছেন শতরূপা—“তথাকথিত শিক্ষিত নাগরিকদের এলাকায় থেকেও আমরা কেন এমন অসভ্যতা মেনে নিচ্ছি? যারা এই বাজি ফাটাচ্ছে, তারা কি বুঝতে পারছে না যে অন্যের শান্তি, ঘুম, এমনকি জীবনও এতে বিপন্ন হচ্ছে?” তাঁর এই প্রশ্নে সাড়া দিয়ে বহু নেটিজেন জানিয়েছেন নিজেদের এলাকাতেও একই অবস্থা। এক নৈহাটি বাসিন্দা লিখেছেন, “আমার বাড়িতে এক প্যারালাইজড রোগী আর একটা ১০ মাসের পোষা কুকুর আছে। গতকাল থেকে ওরা ভয় আর আতঙ্কে আছে। নিষেধ করেও লাভ নেই। থানায় জানালেও কিছু হবে না।”
অভিযোগের তালিকায় যুক্ত হয়েছে শহরের আরও বহু নামী এলাকা—দমদম, টালিগঞ্জ, পিকনিক গার্ডেন থেকে বেহালা। পিকনিক গার্ডেনের এক বাসিন্দা মন্তব্য করেছেন, “আমাদের এখানেও অবস্থা একই। যারা নিয়ন্ত্রণ করবে, তারাই বাজি ফাটাচ্ছে। সবাই যেন মেনে নিয়েছি এটা নিয়মিত ব্যাপার।” এই কথাগুলোই বুঝিয়ে দিচ্ছে—আইন ভাঙা এখন অনেকের কাছে স্বাভাবিক উৎসবের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুনঃ শুটিং সেটেই হঠাৎ অসুস্থ ‘পরিনীতার’ দাদু! তড়িঘড়ি ভর্তি করা হলো হাসপাতালে! কেমন আছেন অভিনেতা সুব্রত গুহ রায়?
শব্দবাজি যে শুধু বিরক্তিকর নয়, তা প্রাণঘাতীও হতে পারে—এ কথা সবাই জানে। তবুও উৎসবের নাম করে সেই বিপদের দিকেই যেন আমরা হেঁটে যাচ্ছি। শতরূপার ভিডিও আর তাঁর তীব্র মন্তব্য যেন এক আয়না—যেখানে প্রতিফলিত হচ্ছে নাগরিক দায়িত্বহীনতা, প্রশাসনিক উদাসীনতা আর আমাদের ক্রমশ বেড়ে ওঠা স্বার্থপরতা। প্রশ্নটা তাই এখন সবার—“কেন আমরা আলোয় আনন্দ খুঁজি, কিন্তু অন্ধকারে ঢেকে ফেলি অন্যের শান্তি?”