বলিউডে তখন লতা মঙ্গেশকর এবং আশা ভোঁসলের রাজত্ব চলছে। এই সময় আবির্ভাব হয়েছিল আরও এক গায়িকার। তিনি সুমন কল্যাণপুর। যাঁরা তাঁর গান শুনেছেন তাঁরা কেউই লতামঙ্গেশকর এবং তাঁর গলার মধ্যে কোনও পার্থক্য খুঁজে পাননি। অদ্ভুত মিল ছিল তাঁদের। আর এটাই হয়তো কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল গায়িকার।
১৯৩৭ সালের ২৮শে জানুয়ারি অবিভক্ত ভারতের ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন এই গায়িকা। ভারতবর্ষের বেশিরভাগ ভাষাতেই গান গেয়েছেন তিনি। যতটা প্রতিভাবান ছিলেন তিনি তাঁর কণামাত্রও প্রাপ্যও জীবনে পাননি তিনি বলে মনে করেন তাঁর ভক্তরা। অসম্ভব প্রতিভাময়ী ছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর ভক্তরা বলেন খুব ভুল সময়ে এসেছিলেন তিনি। কারণ সেই সময় বলিউডে লতা মঙ্গেশকরের রাজত্ব চলছে। তার পাশে টিকতে পারেননি এই গায়িকা।
জানা যায় সুমন কল্যাণপুরের গানের প্রতি ভালো লাগা তৈরি হয়েছিল নুরজাহানের গান শুনে। বাড়ি বা স্কুলের অনুষ্ঠানে তিনি অল্পবিস্তর গান গাইতেন। প্রখ্যাত মারাঠি সংগীত পরিচালক কেশবরাও ভোলে একবার সুমনের গান শুনেছিলেন। প্রতিভা চিনে নিতে তাঁর সময় লাগেনি। এরপর কেশবরাও ছাত্রী করে নেন সুমনকে।
এরপর আর কোনদিনও পিছন ফিরে থাকতে হয়নি সুমন কল্যাণপুরকে। তাঁর গাওয়া জনপ্রিয় সব গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, ‘দিল এক মন্দির’, ‘নুরজাহান’, ‘দিল হি তো হ্যায়’, ‘বাত এক রাত কি’, ‘জাহান আরা’, ‘পাকিজা’ প্রভৃতি।
উল্লেখ্য, মহম্মদ রফির সঙ্গে সুমন কল্যাণপুর ১৪০টি ডুয়েট গেয়েছিলেন। এছাড়াও মদনমোহন, শচীনদেব বর্মন, নৌশাদ, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, শঙ্কর জয়কিষাণ সহ একাধিক তাবড় তাবড় সঙ্গীত পরিচালকদের সঙ্গেও তিনি কাজ করেছেন। এমনকী তিনি গান গেয়েছেন লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গেও।
জানেন কী যদি কোনও সঙ্গীত পরিচালকের বাজেট কম থাকত তাহলে তিনি লতা মঙ্গেশকরের জায়গায় সুমনকে গান গাওয়ার অফার দিতেন। আসলে তিনি যে ছিলেন লতাকন্ঠী। লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে তাঁর গলার সে এক অদ্ভুত মিল। আর তাই গোটা জীবন লতা মঙ্গেশকরের নামের পেছনেই কোথাও লুকিয়ে গেলেন সুমন কল্যাণপুর। আলাদা করে আর সেই অর্থে পরিচিতি পাওয়া হলো না গায়িকার।