নব্বইয়ের দশকের টলিউড মানেই একের পর এক সুপারহিট ছবি, আর দুর্দান্ত অভিনয়। বাংলা বিনোদনের ইতিহাসে সেই সময়টায় ছিল স্বর্ণযুগের মতো। উত্তম-সুচিত্রাদের যুগ পার করে, টলিউড (Tollywood) তখন খুঁজছিল পরবর্তী নেতৃত্ব। আর ঠিক তখনই চলচ্চিত্র দুনিয়ায় একসঙ্গে পা রাখেন ‘প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়’ (Prosenjit Chatterjee) , তাপস পাল, চিরঞ্জিত চক্রবর্তী, অভিষেক চট্টোপাধ্যায়দের মতো একঝাঁক প্রতিভাবান অভিনেতা। তাঁদের হাত ধরেই বাংলা ছবির নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়।
নায়িকাদের তালিকাতেও তখন নজর কাড়ছিল একাধিক মুখ। দেবশ্রী রায়, শতাব্দী রায়, পরে এসে যোগ দেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। তাঁদের অভিনয়ের দীপ্তি একাধিক ছবিকে স্মরণীয় করে তুলেছিল। দেবশ্রী-তাপসের জুটির জনপ্রিয়তা তখন তুঙ্গে। দেবশ্রী এক সাক্ষাৎকারে একবার নিজেই বলেছিলেন, তাপসের সঙ্গে তাঁর অনস্ক্রিন কেমিস্ট্রি সবচেয়ে বেশি প্রশংসিত হয়েছিল। কিন্তু সেইসঙ্গে তিনি এ-ও স্বীকার করে নেন, প্রসেনজিতের সঙ্গেও তাঁর কিছু কাজ রীতিমতো মাইলফলক হয়ে রয়েছে।
সেই তালিকায় প্রথমেই আসে ‘উনিশে এপ্রিল’। ঋতুপর্ণ ঘোষের এই উল্লেখযোগ্য ছবিতে দেবশ্রী-প্রসেনজিতের অভিনয় মুগ্ধ করেছিল দর্শকদের। সম্পর্কের জটিলতা, মায়ের সঙ্গে মেয়ের টানাপোড়েন— সব কিছুই অত্যন্ত সংবেদনশীল ভঙ্গিতে ফুটে উঠেছিল এই ছবিতে। এই ছবির মাধ্যমে দেবশ্রী-প্রসেনজিৎ জুটি এক ভিন্ন মাত্রা পায়, যা নিছক বাণিজ্যিক ছবির বাইরে গিয়ে শিল্পসত্তার জায়গা তৈরি করেছিল।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই বিনোদন জগৎ থেকে সরে গেছেন। তাপস পাল প্রয়াত হয়েছেন, দেবশ্রী রায় রাজনীতির ময়দানে ব্যস্ত। অন্যদিকে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় আজও অভিনয়ে দাপট দেখিয়ে চলেছেন— তা সে বাংলা হোক কিংবা হিন্দি, ওয়েব হোক বা বড়পর্দা। একজন অভিনেতা হিসেবে তিনি সময়ের সঙ্গে নিজেকে বদলে নিয়েছেন এবং প্রমাণ করে দিয়েছেন, টিকে থাকার নামই সফলতা।
এত কিছুর মধ্যেও সম্প্রতি মুম্বইয়ের এক সাক্ষাৎকারে প্রসেনজিত্ চট্টোপাধ্যায় যখন বলেন, “আমাদের প্রজন্মের সবচেয়ে সেরা দু’জন অভিনেতা-অভিনেত্রী হলেন তাপস পাল এবং দেবশ্রী রায়, এটা আমি চিরকালই বলেছি,” তাঁর কথায় স্পষ্ট বোঝা যায়, তাঁর নজরে অন্যদের প্রতি শ্রদ্ধা আর হৃদয়ের জায়গা কোনখানে। জনপ্রিয়তার চূড়ায় থেকেও অন্যকে সম্মান জানাতে পিছপা হন না বুম্বাদা, আর এটাই তাঁকে অন্যদের থেকে আরও অনন্য করে তোলে।