আজ টেলিভিশনের দুনিয়ায় তার নাম জানে না এমন বাঙালি দর্শক খুঁজে পাওয়া যাবে না। বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত এবং বর্তমানে এক প্রথম সারির বাংলা চ্যানেলের অন্যতম জনপ্রিয় ধারাবাহিকের মুখ্য চরিত্র হয়ে উঠেছেন।
প্রতিটা মানুষের জীবনে একটা যাত্রা থাকে যে পথ ধরে তারা উন্নতি বা সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছায়। মাঝখানে থাকে অনেক অজানা কথা অনেক কষ্ট অনেক চাপা দুঃখ। তেমনই একটা কঠিন অধ্যায়ের কথা প্রকাশ করেছেন এই অভিনেতা সকলের সামনে। এতটা কষ্ট পেরিয়ে আজ তিনি সফল অভিনেতা এবং তাই তার মত যারা অভিনেতা বা অভিনেত্রী হতে চায় তাদের একটাই বার্তা দিতে চান যে জীবনে কিছু করতে গেলে সবার আগে লক্ষ্য স্থির রাখতে হবে।
যে অভিনেতার কথা বলছি তিনি হলেন স্টার জলসার জনপ্রিয় ধারাবাহিক এই পথ যদি না শেষ হয় এর সাত্যকি। বেশিরভাগ মানুষ তাকে ছেড়ে সাত্যকি হিসেবে তবে অভিনেতার আসল নাম ঋত্বিক মুখার্জি। অভিনেতার বাবা একসময় থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন প্রত্যক্ষভাবে। বাবাকে স্টেজে পারফর্ম করতে দেখে উদ্দীপিত হয়েছিলেন ঋত্বিক।
কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিতে কাউকে চিনতেন না তখন। ছিল না কোন গডফাদার। তাই অভিনয় জানা এবং শেখার জন্য প্রথমে থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হলেন। তিনি স্বীকার করেছেন সরাসরি যে থিয়েটার করলে কোন টাকা পয়সা আসে না তাই সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে দীর্ঘদিন থিয়েটার করা চ্যালেঞ্জিং বিষয়।
তবে প্র্যাকটিস করতে যাওয়া আসা এই সমস্ত ভাড়া কে দেবে? অবশেষে নিজের টাকা মিটিয়ে দেওয়ার জন্য শুরু করলেন পার্ট টাইম জব। কিন্তু তাতেও যখন কুলাতে পারছেন না তখন থিয়েটার পুরোপুরি ছেড়ে দিয়ে এক বছর চাকরি করেছেন অভিনেতা। এক বছরের জমানো টাকা নিয়ে আবার থিয়েটারে ফিরে এসেছেন তিনি। অবশেষে ক্লান্ত হয়ে থিয়েটার ছেড়ে দিয়েছিলেন।
আবার এক চাকরিতে যোগ দিলেন একটি নামকরা প্রতিষ্ঠানে। ১৪ মাস সেই চাকরি করেছিলেন তিনি। আবার নড়ে উঠলে মাথার পোকা এবং এক বন্ধু ফোন করে বলে শর্ট ফিল্মে একটা ভালো চরিত্রের জন্য। সেখানে গিয়ে অনেকেই বলাবলি শুরু করলেন এবং উপদেশ দিলেন অভিনেতাকে যে তার জন্য এইসব চাকরি-বাকরি নয়। অবশেষে পুরোপুরি অভিনয় হয়ে উঠল তার ধ্যান-জ্ঞান।
লকডাউনের সময়টায় প্রবল আর্থিক কষ্টের মধ্যে দিয়ে গিয়েছিলেন অভিনেতা ঋত্বিক। তখন জানিয়েছিলেন প্রায় ৩৭ দিন মোবাইল একটা কোনায় পড়েছিল কারণ তিনি রিচার্জ করার পয়সা জোগাড় করতে পারেন। অবশেষে চরম হতাশায় আয়নার দিকে মুখ তুলে তাকাতে পারতেন না। শেষে কিছু না করতে পারে পাড়ার মোড়ে সবজির দোকান খুলেছিলেন ঋত্বিক মুখার্জী। সেই দোকান চালিয়েছিলেন প্রায় তিন মাস। পাড়ার মোড়ে একটা চট পেতে দশ রকমের সবজি নিয়ে বসতেন।
কিন্তু সেই অবস্থা থেকে ঋণী ঘুরে দাঁড়িয়েছেন এবং বহু মানুষের মন জয় করেছেন সাত্যকি হিসেবে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। তিনি আজও আয়নার সামনে দাঁড়ালে তার বিশ্বাস হয় না তিনি আজ এক প্রথম সারির চ্যানেলের হিরো। অভিনেতা মনে করেন জীবনে কোন বাধা না এলে ভবিষ্যতে তিনি যে জায়গায় পৌঁছাবেন সেটা উপভোগ করতে পারবেন না।