যদি সত্যিকার অর্থে আপনি মন থেকে কোনও কিছু করতে চান তাহলে আপনার জীবনে হয়ত কোনও বাধাই আর আপনার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। সমস্ত প্রতিবন্ধকতা, বাধাকে দূর করতে হলে মানসিক শক্তি, দৃঢ়তা এবং ইচ্ছাশক্তিকে অত্যন্ত শক্তিশালী, বলশালী হতে হবে। তেমনই এক অসাধ্য সাধনের বাস্তব ঘটনা আজ আপনাদের জানাব।
আজ থেকে বছর দুয়েক আগে গোটা পৃথিবীর জীবন ওলট-পালট করে দিয়ে গিয়েছে করোনা মহামারী। কত মানুষ পথে বসেছেন, কত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, বেকার হয়ে গেছেন।জনজীবন বিধ্বস্ত করে দিয়ে গেছে একটা মহামারী। তবে এই মহামারী থেকেই আবার কিছু মানুষ নতুন কিছু করার স্বপ্ন দেখেছেন। নতুন বীজ বপন করেছেন। আর সেই রকমই একজন হলেন, জামুড়িয়ার তিলকা মাঝি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক দীপনারায়ণ নায়েক।
অতিমারীর সময় তিনি লক্ষ্য করেছেন আমাদের রাজ্যে এমন অনেক শিশু রয়েছে, যাদের অনলাইন শিক্ষা নেওয়ার সামর্থ্য নেই। অবশ্যই নেই প্রাইভেট টিউশন নেওয়ারও মতো আর্থিক ক্ষমতা। তবে শুধুমাত্র অর্থাভাবেই কি তাদের পড়াশোনা হবে না? আর সেই সমস্ত হতদরিদ্র পরিবারের শিশুদের পড়াশোনার জন্য তিনি নিয়ে নেন এক বিশেষ উদ্যোগ। এক অভিনব পদ্ধতিতে শুরু করেছেন শিক্ষাদান।
গাছের তলায় বসে সেই সমস্ত নুন আনতে পান্তা ফুরোয় পরিবারের ছেলেমেয়েদের শিক্ষাদান করা শুরু করলেন তিনি। প্রথম প্রথম নিজের অর্থে সবাইকে স্লেট, পেন্সিল, খাতা, বই পেন কিনে দিতেন। কিন্তু পরবর্তীতে আর নিজের ওই শিক্ষকতার মাইনে দিয়ে টানতে পারছিলেন না।সেইজন্য নিয়ে ফেলেন এক নতুন উদ্যোগ। আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামের কাঁচা মাটির বাড়ির দেওয়ালকেই কালো রং করে ব্ল্যাকবোর্ড বানিয়ে ফেলেছেন তিনি। আর সেখানেই প্রতিদিন প্রতিনিয়ত ভবিষ্যতের জন্য বীজ বপন করে চলেছেন ‘রাস্তার মাস্টার।’
আরও পড়ুনঃ সুখবর! বাস্তবে বিয়ের পিঁড়িতে মিঠাই তারকা! পাত্র-পাত্রী দুজনকেই চেনেন আপনিও
হ্যাঁ, এই নামেই পরিচিত তিনি। নিজ হাতে তৈরি করা সেই ব্ল্যাকবোর্ডেই কখনও ফুটে উঠছে বর্ণপরিচয় আবার কখনও এবিসিডি। শুধু কি তাই? শিক্ষাদানের মাধ্যমে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে বিজ্ঞান সচেতনতার কাজও করে চলছেন তিনি। সম্প্রতি তিনি এসেছিলেন দাদাগিরির (Dadagiri) মঞ্চে। তার এই সাধু উদ্যোগে মুগ্ধ হন খোদ সৌরভ গাঙ্গুলীও। এমন মানুষও যে আছে তা জেনে খুশি বাঙালিও।