বাংলা বিনোদন জগতের এক সুপরিচিত মুখ ‘অপরাজিতা আঢ্য’ (Aparajita Adhya) , বড় পর্দা থেকে ছোট পর্দা—প্রায় তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি দর্শকদের মন জয় করে আসছেন অভিনয় দক্ষতা দিয়ে, তাঁর ব্যক্তিগত জীবনও কম নাটকীয় নয়। খুব অল্প বয়সেই ভালোবেসে সংসার পাতেন অতনু হাজরার (Atanu Hazra) সঙ্গে, যিনি ছিলেন একজন সাউন্ড টেকনিশিয়ান এবং বয়সে অনেকটাই বড়। এই সম্পর্ককে প্রথমে মেনে নেয়নি সমাজ। অনেকেই তাঁকে সাবধান করেছিলেন! সে সব কথায় কান না দিয়ে, নিজের মনের কথা শুনেই এগিয়েছিলেন অপরাজিতা।
অভিনেত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, তিনি বড়লোকদের খুব একটা পছন্দ করতেন না। বরং মধ্যবিত্ত অতনুর ছোট একতলা বাড়ি ও মানুষটি তাঁকে টেনেছিল বেশি। অপরাজিতা বিশ্বাস করতেন, অতনু-ই তাঁর জীবনের সাফল্যের সিঁড়ি হয়ে উঠতে পারে। সেই বিশ্বাসেই আইনি ও সামাজিক বিয়ে সারেন মাত্র একমাসের মধ্যে। আজও তাঁরা একই সেই একতলা বাড়িতেই থাকেন, এবং অভিনেত্রী জানিয়েছেন যে, নিজের পরিবারের সজীব উপস্থিতি ছাড়া তিনি বাঁচতেই পারেন না।

সম্প্রতি এক সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অপরাজিতা তুলে ধরেন সমাজের এক গুরুত্বপূর্ণ দিক। অভিনেত্রী বলেন, “এখন ৪০ ঊর্ধ্ব মহিলাদের ডিভোর্সের মাত্রা বেড়ে গেছে, তার কারণ হয়তো তাঁরা সত্যিই ‘পুরাতন’ হয়ে যায়।” শর্মিলা ঠাকুর ও ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত অভিনীত ‘পুরাতন’ ছবির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বোঝাতে চান, সংসার, সন্তান সব কিছু সামলে নারীরা যখন নিজেদের জন্য কিছু করতে চান, তখন অনেক সময়ই পরিবার তাঁদের সেই জায়গা দেয় না। অথচ, ৪০-এর পরেই নারীর জীবনের আসল পর্ব শুরু হয়।
অপরাজিতা আরও বলেন, “আমি খুব তাড়াতাড়ি ৫০-এ পা দিতে চলেছি, তাই অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি, ৪০-এর পরেই নারীরা জীবনের মূল্য বুঝতে শেখে। তখন তাঁর প্রয়োজন হয় এমন একজন সঙ্গীর, যিনি নিঃস্বার্থভাবে পাশে থাকবেন—আর সেই ভূমিকা সন্তানদের থেকেও ভালো আর কেউ পালন করতে পারে না। জীবনের মধ্যগগনে এসে নারী যখন নিজের স্বপ্নের দিকে এগোতে চায়, তখন সমাজ বা পরিবার অনেক সময়ই তাঁকে আটকে দিতে চায়।
আরও পড়ুনঃ আবার সুখবর দিলেন অভিনেত্রী অনিন্দিতা! মেয়ের বয়স দু’মাস হতে না হতেই নিয়ে ফেললেন বড় সিদ্ধান্ত!
কিন্তু সেই বাধা অতিক্রম করেই নারীরা পারেন নিজেকে গড়ে তুলতে।” সবশেষে অপরাজিতা আঢ্য বলেন, “একসময়ে মায়েরা যেমন করে সন্তানদের বড় করে তুলেছেন, তেমনি ছেলে-মেয়েদেরও দায়িত্ব আছে তাঁদের মায়েদের ঠিক সেই ভাবেই আদর-যত্ন করে ফিরিয়ে দেওয়ার। বৃদ্ধাশ্রম নয়, বরং পরিবারের কোণাতেই হোক মা’র শেষ আশ্রয়।” এই কথাগুলোর মধ্যে দিয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে অভিনেত্রীর জীবনদর্শন, যেখানে ভালোবাসা থেকে সম্মান ও নিজের জায়গা ধরে রাখাই সবচেয়ে বড় অর্জন।