জয়েন গ্রুপ

বাংলা সিরিয়াল

এই মুহূর্তে

“আজও কিছু গ্রামে মেয়েদের পরিবারের সব পুরুষদের সঙ্গে সহবাসে বাধ্য করা হয়…” সমাজে মেয়েদের অবস্থান নিয়ে বিস্ফোরক মিমি!

বাংলা বিনোদন জগতে ‘মিমি চক্রবর্তী’ (Mimi Chakraborty) এক পরিচিত নাম। সিরিয়াল দিয়ে কেরিয়ার শুরু করলেও, নিজের অভিনয় দক্ষতা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি আজ বড় পর্দা, ওয়েব সিরিজ (web series) —সব জায়গাতেই সফল। ‘গানের ওপারে’ ধারাবাহিকের চরিত্র তাঁকে দর্শকদের আরও কাছের করে তুলেছিল। এরপর ‘বোঝেনা সে বোঝেনা’ (Bojhena Shey Bojhena) তাঁকে অভিনয় দুনিয়ায় স্থায়ী জায়গা করে দেয়। বড় পর্দায় আত্মপ্রকাশ হয় ‘বাপি বাড়ি যা’ ছবির মাধ্যমে। সময়ের সঙ্গে নিজেকে ভেঙে গড়ে নিয়ে একের পর এক নতুন চরিত্রে নিজেকে মেলে ধরেছেন মিমি।

তবে শুধুই একজন অভিনেত্রী হিসেবে নয়, একজন আত্মনির্ভর, সাহসী ও স্পষ্টভাষী নারী হিসেবেও মিমি চক্রবর্তী অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন অনেকের কাছে। অভিনয়ের পাশাপাশি গান, ফ্যাশন, সমাজসেবার কাজেও তাঁর পদচারণা। সমালোচনার ভয় না করেই তিনি বরাবর নিজের মত প্রকাশ করেছেন, চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন, নিজের জীবন নিজের শর্তে বেঁচেছেন। সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত তাঁর ওয়েব সিরিজ ‘ডাইনি’ (Dainee) -তে সমাজের গভীরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস আর নারীদের প্রতি হওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তিনি।‘ডাইনি’ সিরিজের গল্প এক বাস্তব সমস্যার ওপর ভিত্তি করে তৈরি।

image 68

এখনও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে, মহিলাদের ‘ডাইনি’ অপবাদ দিয়ে অত্যাচার করা হয়। শুধু কুসংস্কার নয়, অনেক সময় সম্পত্তির লোভেও মহিলাদের এই অভিযোগের শিকার হতে হয়। মিমি বলেন, “আজকের দিনে দাঁড়িয়েও আমাদের সমাজে নারীদের এই অবস্থা দেখলে অবাক লাগে। মানুষ চাঁদে যাচ্ছে, মঙ্গল অভিযানে নেমেছে, আর আমরা এখনও মেয়েদের ঘোমটার আড়ালে আটকে রাখছি!” তিনি মনে করেন, এই ধরনের গল্প সামনে আসা দরকার, যাতে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো যায়। শুধু ডাইনি অপবাদ নয়, মিমি আরও এক চরম বাস্তবের কথা তুলে ধরেছেন।

আজও কিছু গ্রামে মেয়েদের পরিবারের সব পুরুষদের সঙ্গে সহবাসে বাধ্য করা হয়! স্বামীর সহবাসে সন্তান না হওয়ায় তাঁকে এই নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হয় এবং বাড়ীর লোকেরা স্বগর্বে সে কথা স্বীকার করে? মিমি এই নিষ্ঠুর প্রথার কথা জানতে পেরে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে মিমি বলেন, “আজকের দিনে নারীর উপর হওয়া প্রতিটা অত্যাচারী স্বাভাবিক তকমা লাগিয়ে দেওয়া হয়। তা সে স্বামী স্ত্রীর গায়ে হাত তুলুক কিম্বা বাসের ট্রাম এর কোন ব্যক্তি নারীর অঙ্গ বিশেষ করে বুকের খাঁজের দিকে দৃষ্টিপাত করুক।”

তিনি বলেন, “এই নিয়ে কথা বলতে গেলেই অনেকে নারীবাদী বলে কটাক্ষ করে। কিন্তু আমরা নারীবাদী নই, বরং বছরের পর বছর ধরে অবদমিত নারীদের হয়ে কথা বলছি, নিজেদের অধিকারের দাবি তুলছি।” তবে এই কঠিন বাস্তবের মধ্যেও মিমি নিজের জীবন নিয়ে বরাবর আত্মবিশ্বাসী। তিনি মনে করেন, নিজের মতো বাঁচাই আসল নারীবাদ। অনেকে তাঁকে ‘বোল্ড’ বা ‘ফিয়ারলেস’ বলেন, কিন্তু তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “আমি যা ঠিক মনে করি, সেটাই করি। আমি যদি নিজের জীবন নিয়ে সিদ্ধান্ত না নিতে পারি, তাহলে আমি স্বাধীন নই।”

মিমি মনে করেন, এক জন মেয়ে হিসেবে সবসময় সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা বাইরের দুনিয়ার কটাক্ষের মুখোমুখি হতে হয়, কিন্তু সেইসবকে পাত্তা না দিয়ে নিজের পথেই এগিয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। অভিনয়, রাজনীতি, সমাজসেবা—প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিজের আলাদা ছাপ ফেলেছেন মিমি চক্রবর্তী। মিমি চক্রবর্তীর এই স্পষ্টবাদী মনোভাব, সমাজের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস তাঁকে শুধুমাত্র একজন সফল অভিনেত্রী নয়, বরং একজন সংগ্রামী, আত্মবিশ্বাসী নারীতে পরিণত করেছে।

Piya Chanda