বাংলা সহ গোটা দেশের সংগীত দুনিয়ায় আজকাল যেন নতুন এক প্রবণতা দেখা যায়—কোনও গান রাতারাতি ভাইরাল, পরের দিনই সেই শিল্পীর নাম চারদিকে। কিন্তু এই ‘ট্রেন্ড’-এর সুফল–কুফল নিয়ে বহুদিন ধরেই বিতর্ক চলছে। সংগীতপ্রেমীরা যেমন নতুন নতুন কণ্ঠের খোঁজ পান, তেমনই অনেকেই অভিযোগ তুলছেন—ভাইরাল হওয়ার দৌড়ে নষ্ট হচ্ছে সংগীতের আসল গুণমান। এই প্রেক্ষিতেই সম্প্রতি সরব হলেন ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের কিংবদন্তি পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী।
একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে তিনি স্পষ্ট জানালেন, আজকাল শিল্পীরা যতটা না সাধনা করছেন, তার চেয়ে বেশি সময় দিচ্ছেন সোশ্যাল মিডিয়া–কেন্দ্রিক প্রচারে। মানুষও নিজের অজান্তে প্রতিনিয়ত স্ক্রিনে আটকে থাকছেন। তিনি উদাহরণ হিসেবে তুলে আনলেন রানাঘাট স্টেশনে গান গেয়ে রাতারাতি পরিচিত হয়ে ওঠা রানু মন্ডলকে, কিংবা ‘কাঁচা বাদাম’–এর স্রষ্টা ভুবন বাদ্যকরকে। তবে এই ভাইরাল হওয়ার দুনিয়া ঠিক কতটা সংগীতকে প্রভাবিত করছে, সেই প্রশ্ন তুললেন তিনি।
এই প্রশ্নের উত্তরে তাঁর মন্তব্য অত্যন্ত স্পষ্ট—তিনি আজকাল নিজে গান করতে চান না। কারণ, তাঁর মতে সংগীত যখন সবার সঙ্গে মিশে যায়, তখন তার অভিনবত্ব হারিয়ে ফেলে। তিনি বলেন, “যেদিকে সবাই যায়, আমি সেদিকে যাই না। তবে অন্য গানকে অসম্মান করি না।” নিজের পথে চলার এই দৃঢ় সংকল্প আসলে আজকের বাণিজ্যিক সংগীতের চাপের প্রতি একরকম প্রতিবাদই বটে।
এই প্রসঙ্গে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন রাগসঙ্গীতের মাহাত্ম্যের কথা। তাঁর কথায়, লতা মঙ্গেশকর ও আশা ভোঁসলের মতো মহান শিল্পীরাও শাস্ত্রীয় সংগীতের কাছে ঋণী। তিনি জানান, লতাজি নিজে একবার তাঁকে বলেছিলেন—অজয়ের কন্যা কৌশিকীর প্রশিক্ষণ দেখতে আবার আসবেন। এই স্মৃতি টেনে এনে তিনি বোঝান—ভারতীয় সংগীতের মেরুদণ্ড হলো শাস্ত্রীয় ধারাই।
আরও পড়ুনঃ কুটকাচালী বা ষড়যন্ত্র নয়, এবার শুধুই ভক্তি-ভালোবাসার গল্প! ‘তারে ধরি ধরি মনে করি’-তে রীতা দত্ত থেকে অহনা-মানসী সবাই ইতিবাচক, খলনায়কহীন গল্পের পথে জি বাংলা! প্রথমবার ভিলেন ছাড়াই এগোতে চলেছে বাংলা ধারাবাহিক? সত্যিই এমন হলে কেমন হবে?
শেষে ‘ভাইরাল’ গান নিয়ে তিনি একটি তীক্ষ্ণ কিন্তু বাস্তব বক্তব্য রাখেন—“কেউ দুধ বেচে মদ খায়, কেউ মদ বেচে দুধ খায়। যে যেটা ভালবাসে তাই করবে।” তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট—ভাইরাল হওয়া বা না হওয়া আসলে শিল্পীর ব্যক্তিগত পথচলা; তবে সংগীতের গভীরতা বুঝতে হলে সোশ্যাল মিডিয়ার ঝড়ে ভেসে না গিয়ে সাধনায় মন দিতে হবে।
