জয়েন গ্রুপ

বাংলা সিরিয়াল

এই মুহূর্তে

“একসময় ফুটপাতে থাকতাম, পাঁচ টাকার খাবার কিনে খেয়েছি…সেলিব্রিটি তকমা লাগানোর মতো দুঃসাহস আমার নেই, আমি অভিনেতা হয়েই থাকতে চাই” তারকা হওয়ার তাড়নায় না, দর্শকের ভালোবাসায়ই খুঁজে পান সাফল্য, জীবন দর্শন তুলে ধরলেন অম্বরীশ ভট্টাচার্য!

পর্দায় তাঁকে দেখলে মনে হয় যেন কোনও বাঁধা-ধরা নিয়মের মধ্যে তিনি নেই। যা করেন, নিজের মতো করেই করেন। এই স্বাধীনতাটাই যেন তাঁর শক্তি, আর তিনি হলেন অভিনেতা ‘অম্বরীশ ভট্টাচার্য’ (Ambarish Bhattacharya)। অভিনয়ের জগতে এত দিন কাজ করেও তিনি কখনও নিজের নামের সঙ্গে জুড়ে থাকা ‘চরিত্রাভিনেতা’ পরিচয় বদলানোর চেষ্টা করেননি। কারণ তিনি জানেন, যে জায়গায় তিনি স্বস্তি পান সেখানেই তাঁর সেরাটা বেরিয়ে আসে। নায়ক হওয়ার মতো দায়িত্ব তিনি নিতে চান না। কারণ, সেই জায়গায় সাফল্য-ব্যর্থতার তাগিদ অনেক বেশি আর সে বোঝা বইতে ক্ষমতা লাগে।

বরং নানা রকম চরিত্রে প্রাণ দেওয়া, গল্পের বিভিন্ন কোণ থেকে নিজের ভূমিকা গড়ে তোলাটা নিয়েই তিনি খুশি। পর্দার বাইরেও তেমনই কোনও বাধ্যবাধকতা নেই তাঁর জীবনে। নিজের স্বাধীনতাকে তিনি খুব সচেতনভাবে আগলে রাখেন। হয়তো তাই আজ পর্যন্ত বিয়ের বন্ধনে বাঁধা পড়েননি। ব্যক্তিগত জীবনের এই সিদ্ধান্তও এসেছে সেই একই জায়গা থেকে, নিজেকে মুক্ত রাখার ইচ্ছে। তাঁর কাছে জীবন মানে নিজের ছন্দে চলা আর সেই ছন্দে অন্যের চাপ বা প্রত্যাশা যেন খুব একটা জায়গা পায় না।

তবে, নিজেকে কখনোই তিনি সেভাবে তারকার আসনে বসাতে রাজি নন। অভিনয় জীবনটা শুরু থিয়েটার থেকে, সেখানেই প্রথম সুযোগ আসে রাজা-গজা ধারাবাহিকের। নির্মাতারা একজন ভারী চেহারার, সরল মুখের অভিনেতার খোঁজ করছিলেন। অম্বরীশকে তাঁদের পছন্দ হয়ে যায়, ব্যাস তিনি রাতারাতি এক প্রজন্মের কাছে অত্যন্ত প্রিয় অভিনেতা হয়ে ওঠে। সম্প্রতি তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি নিজেকে তারকা হিসেবে অযোগ্য কেন মনে করেন? অভিনেতা বলেন, “অযোগ্য নয়, আবার যোগ্য নয়।

ভগবানের আশীর্বাদে আর দর্শকদের ভালোবাসায়, আমি হয়তো পরিচিত মুখ। এতেই আমি সুখী, এর বাইরে আর কিছুই হতে চাই না। তারকা বা সেলিব্রিটি তকমাটা লাগানোর মতো দুঃসাহস আমার নেই। একজন সেলিব্রেটি তাঁকেই বলে, যাকে নিয়ে সমাজ সেলিব্রেট করে। যেমন সত্যজিৎ রায় বা উত্তম কুমার, তারাও সেলিব্রিটি আর আমিও! সেটা কি সম্ভব?” এরপর তাকে প্রশ্ন করা হয়, এতদিন ইন্ডাস্ট্রিতে থাকার পর মনে হয় না যে জীবন যাপনে একটু পরিবর্তন আনি বা বিলাসিতা করি?

অম্বরীশ বলেন, “অযথা বিলাসিতার কি কোনও দরকার আছে? আমি তো দর্শকদের ভালোবাসায় এমনিতেই বিলাসবহুল জীবন কাটাচ্ছি। আর আমার ব্র্যান্ড এর কি দরকার, আমি তো নিজেই একটা ব্র্যান্ড! একটা দামী গাড়ি থেকে অচেনা ও অযোগ্য লোক নামার থেকে, একটা ছোট গাড়ি থেকে পরিচিত আর যোগ্য লোক নানাটাই ভালো। এক সময় ফুটপাতে থাকতাম, মাত্র পাঁচ টাকা দিয়ে খাবার কিনে খেয়েছি। তাও ভাবতাম যে টাকাটা খরচ করে খাবো কি না, আজকে যে জায়গায় পৌঁছিয়েছি সেটা তো রাজার হালে থাকা!”

অম্বরীশ আরও বলেন, আজকাল যখন নিজের চোখে দেখেন একজন অভিনেতা কোনও দৃশ্য বা বিশেষ সংলাপের পুরো কৃতিত্ব তাই নিজের করে নিচ্ছেন, অস্বস্তি হয় অম্বরীশের! তিনি মনে করেন একটা দৃশ্য বা সংলাপের পিছনে টেকনিশিয়ান থেকে শুরু করে চিত্রগ্রাহক, লেখক বিভিন্ন লোকের অবদান থাকে। ঠিক যেমন একটা প্রতিমা গড়তে অনেকগুলো পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয় আর অন্তিম রূপটাই হচ্ছে অভিনেতা। সুতরাং আজকের যুগে দাঁড়িয়েও অম্বরীশ কখনোই পুরো কৃতিত্ব নিজের করে নেন না! আর এই কারণেই হয়তো তার সমস্ত চরিত্র এবং ব্যক্তিত্ব দর্শকদের এতটা পছন্দের।

Piya Chanda

                 

You cannot copy content of this page