জয়েন গ্রুপ

বাংলা সিরিয়াল

এই মুহূর্তে

“আমি রাজনীতিক নই…অভিনয় করি, টাকা আর খ্যাতির লোভ থাকলেও আন্দোলন পেশা নয়!” “এপিজে আবদুল কালামই আমার আদর্শ, ওনার মতো শিক্ষিত মানুষই এখন প্রশাসনে দরকার!”— আরজি করের পর কেন আর কোনও আন্দোলনে দেখা যায়নি, উত্তর দিয়ে সোহিনী জানালেন তিনি ক্ষমতাহীন!

এই মুহূর্তে টলিউড অভিনেত্রীদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে বেশি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে, নিঃসন্দেহে তিনি অভিনেত্রী ‘সোহিনী সরকার’ (Sohini Sarkar)। বরাবরই তিনি সমাজ আর বাস্তব জীবনের নানা প্রশ্নে নিজের মত খোলাখুলি জানিয়ে এসেছেন। ২০২৪ সালে আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসক ধ’র্ষণ ও হ’ত্যার ঘটনার সময় গোটা রাজ্য যখন ক্ষোভে ফুঁসছিল, তিনিও প্রতিবাদ করেছিলেন। কিন্তু সেই সময় তাঁর একটি কথা, “বাংলায় সন্তান জন্ম দেব না!”— একেবারে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে।

কেউ বলেছিলেন, একজন শিল্পী হিসেবে তাঁর এই সরল মন্তব্যই সমাজের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছে, আবার কেউ তাঁর কথাকে রাজনৈতিক রঙে রাঙিয়ে সমালোচনায় মেতে উঠেছিলেন। বিশেষ করে বর্তমান শাসক দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের কটাক্ষ বিতর্ককে আরও উস্কে দেয়। সোহিনী কিছুদিন আগেই জানিয়েছিলেন, তাঁর সেই বক্তব্য আসলে বিকৃত করা হয়েছিল। তিনি বলেন, সংবাদ মাধ্যম তাঁর পুরো কথোপকথন না দেখিয়ে কেবল একটি বাক্যকে বারবার প্রচার করেছে, যার ফলে মূল ভাবটা সম্পূর্ণ বিকৃত হয়েছে।

তাঁর দাবি, তিনি ভয় বা ঘৃণা থেকে নয়, বাস্তব উদ্বেগ থেকেই সেই কথা বলেছিলেন। আজকের সমাজে মাতৃত্ব কেবল আবেগের নয়— এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য আর ভবিষ্যতের দায়বদ্ধতা। একটি শিশুকে বড় করে তোলার দায় শুধুমাত্র মায়ের নয়, পুরো সমাজেরও, আর সেই সামাজিক কাঠামো কতটা প্রস্তুত—সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। সোহিনীর মতে, এটা কেবল বাংলার সমস্যা নয়, পুরো দেশই আজ এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে। এরপরেও তাঁর বক্তব্য নিয়ে কটাক্ষ থামেনি।

বলা হচ্ছে, কেন আর কোনও আন্দোলনে দেখা যায়নি তাঁকে? শুধুমাত্র আরজি করের ঘটনাই তো আর মর্মান্তিক নয়, আরও এমন অনেক ঘটনাই হচ্ছে, সেখানে কেন প্রতিবাদের মুখ হচ্ছেন না সোহিনী? সমাজ মাধ্যম থেকে শুরু করে সর্বত্র এই একই প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ক্লান্ত সোহিনী অবশেষে এক সাক্ষাৎকারে উত্তরটা দিলেন। তিনি জানালেন, “প্রথমত ওই আন্দোলনটা করার একটাই উদ্দেশ্য ছিল যে, একজন নারী হয়ে যখন ওই দৃশ্যগুলো কল্পনা করছিলাম– তখন যে মানসিক যন্ত্রণাটা হচ্ছিল ওটার উপশম করা।

আর আমি একজন সাধারণ অভিনেত্রী, আমার হাতে এত ক্ষমতা কই যে প্রতিটা আন্দোলনে অংশ নিতেই হবে নাহলে সফল হবে না সেটা? আমি অভিনয় করি আর ওটাই আমার পেশা। সেই দিয়ে যা টাকা পাই, নিজের সংসার চালিয়ে আরও ছয় সাতজন আছে আমার টিমের, যাদের বেতন দিতে হয়। তাই অভিনয় ছেড়ে তো সর্বক্ষণ এদিক ওদিক আন্দোলনে ঘোড়া সম্ভব নয়! আমায় যাঁরা আদর্শ মনে করে, আমি তাদের কাছে সত্যিই কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমি রাজনীতিক না, সেই দিক থেকে এপিজে আবদুল কালামের মত লোককে আদর্শ করা ভালো।

উনি যেমন রাজনীতি বুঝতেন, তেমন পড়াশোনা নিয়ে বা যে কোনও বিষয়ে আলোচনা করতে ভালোবাসতেন। ওরম শিক্ষিত আর মার্জিত মানুষকেই পার্লামেন্টে দরকার এখন!” সব মিলিয়ে সোহিনীর বক্তব্যে স্পষ্ট, তিনি নিজেকে কোনও রাজনৈতিক মুখ বা পেশাদার কর্মী হিসেবে দেখেন না। তিনি একজন শিল্পী, যিনি নিজের অবস্থান থেকে সমাজের বাস্তবতা নিয়ে কথা বলেন। তাঁর মতে, প্রত্যেকের সীমা আছে আর সবকিছুতেই উপস্থিত থাকা মানেই দায়িত্ব পালন নয়। যে জায়গা থেকে তিনি কণ্ঠ তুলেছেন, সেটাই তাঁর সত্যিকারের প্রতিবাদ।

Rimi Datta

রিমি দত্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর। কপি রাইটার হিসেবে সাংবাদিকতা পেশায় চার বছরের অভিজ্ঞতা।

                 

You cannot copy content of this page