নাট্যজগতে সুজয় প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের (Sujoy Prasad Chatterjee) নাম এক বিশেষ মর্যাদা বহন করে। তার পরিচালিত ও অভিনীত মঞ্চনাটকগুলি দর্শকদের ভাবিয়ে তোলে, সমাজের গভীরতম সত্য তুলে ধরে। তিনি বিশ্বাস করেন, থিয়েটার শুধুমাত্র বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং সমাজের কথা বলার, প্রতিবাদ জানানোর এবং নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরির শক্তিশালী উপায়। তার নাটকে সাহসী বিষয়বস্তু এবং ব্যতিক্রমী পরিবেশনা বারবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়েছে। এছাড়াও অতীতে বাংলা ইন্ডাস্ট্রির বৈষম্যতার কথা নিয়ে মন্তব্যে জেরে বিতর্কের মুখোমুখি হয়েছেন।
অন্যায় প্রতিবাদ করতে তিনি সবসময় মুখিয়ে থাকেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না। বাংলা চলচ্চিত্র জগৎ নিয়ে নানা সময়েই বিভিন্ন বিতর্কের জন্ম হয়েছে। ইন্ডাস্ট্রির অন্দরমহলে রাজনীতির ছায়া পড়েছে বহুবার, কিন্তু অনেকেই এ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেন না। এবার সেই নীরবতা ভেঙে নিজের মতামত জানালেন সুজয় প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়। তার মতে, দর্শকদের হাতে সিনেমার ভবিষ্যৎ নেই, বরং ইন্ডাস্ট্রির ভেতরের শক্তিধর গোষ্ঠীই ঠিক করে দেয় কোন ছবি চলবে আর কোনটি চলবে না।

এমন মন্তব্য নিঃসন্দেহে আলোচনার ঝড় তুলেছে। বর্তমানে বাংলা চলচ্চিত্র জগতে বেশ কিছু সিনেমা বক্স অফিসে আলোড়ন তুলেছে, যার মধ্যে ‘টেক্কা’, ‘বহুরূপী’, ‘বিনোদিনী’, এবং ‘খাদান’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই ছবিগুলি বাংলা সিনেমার বাণিজ্যিক ধারাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, এই সিনেমাগুলি নিয়ে তার মতামত কী, তখন তিনি বলেন, “টেক্কা ও বহুরূপী দেখেছি, অসাধারণ লেগেছে। খাদান দেখার সময় পাইনি। তবে বিনোদিনী ইচ্ছে করেই দেখিনি, আমার দেখতে ইচ্ছা করেনি।”
বিশেষত, ‘বিনোদিনী’ নিয়ে তার স্পষ্ট মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক দানা বাঁধতে পারে। রুক্মিণী মৈত্র এই ছবিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন এবং ছবিটি বক্স অফিসে ভালো ব্যবসা করেছে। কিন্তু সুজয় প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “যদি বিনোদিনী খুব ভালো ব্যবসা করে থাকে রুক্মিণীকে নিয়ে, তবে পরবর্তী ছবিতে রুক্মিণী কেন্দ্রে থাকলেও সে ছবির সাফল্য আসবে, তার কিন্তু কোনও নিশ্চয়তা নেই।” তার এই বক্তব্য ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, শুধুমাত্র একটি ছবির সফলতা কোনো অভিনেত্রীকে সুপারস্টার বানিয়ে দেয় না,
আরও পড়ুনঃ কৃষ্ণ প্রেম থেকে জীবনসঙ্গী, বিয়ের দুই মাসের মধ্যেই খুশির খবর! বাবা হচ্ছেন পর্দার ‘কৃষ্ণ’ গৌরব মণ্ডল! বেবি বাম্পে উজ্জ্বল চিন্তামণি ডায়ানা
বরং প্রকৃত দক্ষতা এবং গল্পের গুণগত মানই সাফল্যের মাপকাঠি, এখানেই শেষ নয়। বাংলা ইন্ডাস্ট্রির দুই শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে ‘ইন্ডাস্ট্রি’ বলে ডাকা হয়। এ বিষয়ে তার মত জানতে চাইলে তিনি বলেন, “একদম ইন্ডাস্ট্রি বলতে পারব না, তবে দুজনেই খুব গুরুত্বপূর্ণ। রাজনীতি ও বিনোদনকে এক সুতোয় বেঁধে রেখেছেন তারা।” এছাড়াও, বাংলা ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে সফল প্রযোজনা সংস্থা নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি উইন্ডোজ প্রোডাকশন হাউসের প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন,”শিবপ্রসাদ নবাগত প্রতিভাদের প্রশিক্ষণের জন্য পারেন তো একটি ব্যবস্থা করতে।” সুজয় প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের এই বিস্ফোরক মন্তব্য নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে। তার বক্তব্য কি ব্যক্তিগত মতামত, নাকি সত্যিই বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির রাজনীতি এতটাই প্রকট হয়ে উঠেছে যে, গুণগত মানের থেকে ক্ষমতা ও যোগসাজশই বড় হয়ে উঠছে? সময়ই দেবে তার উত্তর। তবে এটুকু স্পষ্ট, তার মন্তব্য চলচ্চিত্র মহলে আলোড়ন তুলতে বাধ্য।