বাংলা সংগীত জগতের (Bengali Music Industry) এক অমূল্য রত্ন ‘সুপ্রকাশ চাকী’ (Suprakash Chaki)। অবিভক্ত ভারতের দিনাজপুরে জন্ম হলেও, শৈশবেই পরিবার-সহ কলকাতায় চলে আসেন তিনি। সেখানেই শুরু হয় তাঁর পড়াশোনা ও সংগীত শিক্ষার পর্ব। প্রথাগত রাগসঙ্গীতের চর্চা থেকে শুরু করে আধুনিক বাংলা গানে তাঁর অবাধ দখল ছিল। গানের প্রতি তাঁর নিষ্ঠা ও সাধনার প্রতিফলন দেখা গিয়েছিল একাধিক প্রজন্মের শিল্পীদের অনুপ্রেরণায়।
আকাশবাণী কলকাতার সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলেন তিনি। তাঁর কণ্ঠে বহু রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলগীতি ও আধুনিক বাংলা গান শ্রোতাদের মন ছুঁয়ে গেছে বারবার। শুধু গায়ক হিসেবে নয়, শিক্ষক হিসেবেও তাঁর পরিচিতি ছিল অগাধ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও বাণীচক্র সংগীত শিক্ষায়তনে তাঁর সান্নিধ্যে বহু গায়ক-গায়িকা নিজেদের পথ তৈরি করেছেন। একাধারে শিক্ষাগুরু, সংগীতচর্চাকারী ও এক অনবদ্য কণ্ঠের অধিকারী এই মানুষটি বাংলার সাংস্কৃতিক জগতে রেখে গেছেন অমলিন ছাপ।
কিন্তু জীবনের শেষ অধ্যায়ে এসে সময়টা তাঁর পক্ষে এতটাও সদয় ছিল না। বার্ধক্যজনিত নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে আর্থিক অনটন তাঁকে প্রতিনিয়ত বিপন্ন করে তুলছিল। নিঃসন্তান দম্পতি সুপ্রকাশ ও শমিতা চাকীর সংসার কোনওভাবে টিকে ছিল ছাত্রছাত্রী এবং কিছু ঘনিষ্ঠ মানুষের সহায়তায়। পরিস্থিতি এতটাই সংকটজনক হয়ে ওঠে যে, শিল্পীর অসুস্থতার খবর সংবাদ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং হস্তক্ষেপ করেন।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাজ্যের সংগীত ও সংস্কৃতি মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন শিল্পীর বাড়ি গিয়ে তাঁর অবস্থা খতিয়ে দেখেন। শুধু প্রশাসনিক দিক থেকে নয়, ব্যক্তিগতভাবেও এগিয়ে এসে শিল্পীর হাতে এক লক্ষ টাকা তুলে দেন তিনি। যদিও এত যত্ন-আদরের মধ্যেও শেষরক্ষা হয়নি। দীর্ঘ রোগভোগে জর্জরিত, শীর্ণকায় শরীর নিয়ে শিল্পী নিজেই একসময় জীবনের সঙ্গে লড়াই হেরে যান। কিছুদিন ধরেই খবর মিল ছিল শিল্পী ইহলোক ত্যাগ করেছেন।
আরও পড়ুনঃ অপর্ণা মনে পড়ছে সবকিছু, সেই বাড়ি, সেই ছবি! এতদিনের লুকোনো সত্যের ভার আর বইতে পারছে না আর্য! সত্য সামনে এলে কেঁপে উঠবে চারটে জীবন, হুঁশিয়ারি রাজলক্ষ্মীর! চাপা পাপ ফুঁসে উঠছে, আর্যর মুখোমুখি প্রশ্ন অপর্ণার!
চলতি বছর, ২০২৫ সালের ২৭ জুলাই দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়ার এক বেসরকারি নার্সিংহোমে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সুপ্রকাশ চাকী। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। শিল্পীর প্রয়াণে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে বাংলা সংগীত মহলে। বর্তমানে স্ত্রী শমিতা চাকী একেবারেই একা হয়ে পড়েছেন, যিনি একসময় নিজেও সংগীতজগতে পরিচিত মুখ ছিলেন। এমন এক অন্তহীন শূন্যতা শুধু সংগীতের মঞ্চেই নয়, বাংলার সাংস্কৃতিক চিত্রেও গভীর প্রভাব ফেলেছে।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।