কথায় বলে মাছে ভাতে বাঙালি। বাড়িতে বিশেষত মধ্যাহ্ন ভোজে মাছ না থাকলে ভাত গলা দিয়ে নামে না এরকম বাঙালির সংখ্যা নেহাতই কম নয়। শুধুমাত্র পাতে মাছ থাকলেই এক থালা ভাত খেয়ে নিতে পারবেন অনেকেই। এর ব্যতিক্রম নন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও। তিনি যে একজন ভোজনরসিক বাঙালি ছিলেন সে তথ্য প্রকাশ পেয়েছে বারবার। তবে শুরু তাই নয়, রান্নার প্রতিও বিশেষ আগ্রহী ছিলেন তিনি। জানা যায় কবিগুরুর পত্নী প্রতিমা দেবীও রন্ধন শিল্পে ছিলেন পটু। ফলেই কবিগুরুর জন্য প্রতিদিনই নতুন নতুন পদ উদ্ভাবন হত ঠাকুরের বাড়ির রন্ধনশালায়। তবে ঠাকুরবাড়ির রান্না মানেই সেটা আমিষ হোক বা নিরামিষ, মন্ডা হোক বা মিঠাই সবেতেই থাকবে এক ভিন্ন স্বাদের ছোঁয়া। এও শোনা যায় যে নিরামিষ খাওয়ার নাকি বিশেষভাবে পছন্দ করতেন কবিগুরু। তবে আমিষের মধ্যেও বিশেষ বিশেষ কিছু পদ ছিল যেগুলো খাওয়ার জন্য নাকি স্ত্রীর কাছে প্রায়ই আবদার করতেন তিনি। তেমনই একটি বিশেষ পদ ছিল পাঁচ ফোড়ন দিয়ে পাতলা মাছের ঝোল। খুব সামান্য এবং সাধারণ উপকরণ দিয়েই রান্না করতে পারবেন এই পদটি। গরমের মধ্যে শরীরের জন্যও বিশেষভাবে উপাদেয় এই পদটি। তাহলে চলুন দেরি না করে এবার জেনে নেওয়ায় যাক সে রেসিপিটি।
উপকরণ: বড় বড় ৫-৬ পিস পোনা মাছ, লম্বা লম্বা পিস করে কেটে রাখা আলু ৬ টুকরো, প্রয়োজন অনুযায়ী হলুদ গুঁড়ো, ৫-৬ টি কলাইয়ের ডালের বড়া, লম্বা লম্বা পিস করে কেটে রাখা পটল ৬ টুকরো, তেজপাতা, দরকার মতো ধনে পাতা, ১ টেবিল চামচ আদা বাটা, ৫-৬ টি কাঁচা লঙ্কা, পাঁচফোড়ন, ধনে গুঁড়ো, সামান্য পরিমাণে চিনি, স্বাদ অনুযায়ী লবণ এবং পরিমাণ অনুযায়ী সর্ষের তেল।প্রণালি: প্রথমেই মাছের পিসগুলোকে ভালো করে ধুয়ে নিয়ে নিন। তারপর মাছের পিসগুলোতে নুন, হলুদ মাখিয়ে এবং ওপর দিয়ে সামান্য সর্ষের তেল ছড়িয়ে রেখে দিন। এরপর কড়াইয়ে সর্ষের তেল গরম করে তাতে মাছের পিসগুলো দিয়ে হালকা করে ভেজে একটি পাত্রে তুলে রাখুন। তারপর ওই একই তেলে লম্বা করে কেটে রাখা আলু এবং পটলের টুকরোগুলো দিয়ে তার মধ্যে সামান্য পরিমাণে নুন এবং হলুদ গুঁড়ো দিয়ে ভেজে একটি পাত্রে তুলে রাখুন। এরপর ওই তেলেই কলাইয়ের ডালের বড়িগুলো লাল লাল করে ভেজে নিন। তারপর কড়াইয়ে আরও একটু তেল দিয়ে তাতে পাঁচফোড়ন এবং তেজপাতা ফোড়ন দিয়ে নিন। গন্ধ বেরোতে শুরু করলে কড়াইয়ে দিয়ে দিন আদা বাটা।
এরপর সবটা কিছুক্ষণ কষিয়ে দিয়ে দিন আগে থেকে ভেজে রাখা সবজিগুলো। সবটা কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে দিয়ে দিন ধনে গুঁড়ো, লবণ এবং সামান্য পরিমাণে চিনি। এইসবটা কষাতে কষাতেই দিয়ে দিন হলুদ গুঁড়ো। এবার কড়াইয়ে দিয়ে দিন ভেজে রাখা মাছের পিসগুলো। মশলার সঙ্গে সবটা ভালোভাবে মিশে গেলে পরিমাণ অনুযায়ী জল দিয়ে ঢেকে দিন। ১০ মিনিট পর ঢাকনা খুলে কলাইয়ের ডালের বড়ি এবং কাঁচা লঙ্কা দিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন পাঁচফোড়ন দিয়ে পাতলা মাছের ঝোল। ভাতে সঙ্গে একেবারে জমে যাবে মধ্যাহ্ন ভোজ।