জয়েন গ্রুপ

বাংলা সিরিয়াল

এই মুহূর্তে

“তৃণমূলে গিয়ে বুঝলাম, চামড়া মোটা থাকলে তবেই টেকা যাবে”— তৃণমূলের মঞ্চ ছেড়ে সৌরভ ‘বেঙ্গল ফাইলস’ ছবিতে! চামড়া মোটা নয় বলেই কী শাসকদল ছাড়লেন সৌরভ? না কি ‘দুই নৌকায় পা’ রাখছেন অভিনেতা?

একটা সময় টলিপাড়ায় ‘ওয়েব সিরিজ আইকন’ বললেই ‘সৌরভ দাস’-র (Saurav Das) নাম উঠে আসত। পর্দায় ঝকঝকে উপস্থিতি, সাহসী চরিত্র বাছাই, আর তির্যক মন্তব্যে স্পষ্ট ছিল তাঁর নিজস্বতা। সেই সৌরভই আজ ওয়েব সিরিজের জগৎ থেকে ধীরে ধীরে সরে দাঁড়িয়েছেন। বলছেন, তাঁর মতো চরিত্রদের আর ডাকছে না প্রযোজকরা। তবে যেটা সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ছে, তা হলো তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান বদলের স্বর। একসময় যিনি তৃণমূলের (TMC) মঞ্চে ছিলেন, তিনিই এখন বলছেন— “রাজনীতি আমার দ্বারা হবে না।” প্রশ্ন উঠছে, তবে কি সৌরভ নিজের জায়গা হারিয়েই আজ নিজেকে নতুন করে প্রমাণ করতে চাইছেন?

তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর সৌরভকে বিধানসভা এবং লোকসভা ভোটের প্রচারে দেখা গিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু সেই ছবি যেন বেশিদিন টিকল না। নিজেই স্বীকার করছেন, “রাজনীতিতে থাকতে গেলে চামড়াটা মোটা হতে হয়”,অর্থাৎ আবেগের শিল্পীমন নিয়ে রাজনীতির ময়দানে টিকে থাকা সম্ভব নয়, এমনটা তাঁর বিশ্বাস। অথচ এই মন্তব্যে কোথাও যেন একরাশ হতাশাও লুকিয়ে। রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করতে না পারা, না দল ছাড়ার কোনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা, না থেকেও একপ্রকার থেকে যাওয়ার চেষ্টা, সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত ধোঁয়াশা তৈরি হচ্ছে।

নিন্দুকেরা বলছেন, “চাকরি না পেলে বেকার, আর দল না ডাকলে ‘রাজনীতি আমার দ্বারা হয় না’— এই যুক্তি আত্মরক্ষার ব্যর্থ চেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়।” তার মধ্যেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সৌরভ, যা নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক! বিতর্কিত পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রীর ছবিতে অভিনয় করছেন তিনি, নাম ‘বেঙ্গল ফাইল’। সমাজ মাধ্যম থেকে রাজনীতির চারপাশেই বিতর্ক ঘনিয়ে আছে এই ছবিকে ঘিরে। অনেকেই মনে করেন, এটি বিজেপি ঘেঁষা একরৈখিক প্রোপাগান্ডা। সেই ছবিতে অভিনয় করায় সৌরভের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

তবে অভিনেতা নিজের দিক থেকে বলছেন, “আমি চরিত্র দেখেই কাজ করি, রাজনীতিক মতাদর্শ দেখে নয়।” কিন্তু যখন আপনি একবার রাজনৈতিক মঞ্চে উঠে পড়েছেন, তখন কি আর রাজনৈতিক দায় এড়িয়ে যাওয়া যায়? দর্শক তো শিল্পীকে শুধুই চরিত্র দিয়ে বিচার করেন না, তার নৈতিক অবস্থানকেও দেখতে চান। সৌরভ বারবার বলছেন, তিনি কোনও দলের হয়ে কথা বলেন না। অথচ তাঁকে যদি আবার ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে ডাকা হয়, তিনি নিশ্চয়ই যাবেন— এমনই মন্তব্য করেছেন। তাহলে কি তিনি স্রেফ সুযোগমতো নিজেকে রাজনৈতিকভাবে সাজাচ্ছেন?

না কি শিল্পীর স্বাধীনতা বজায় রাখার নাম করে দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছেন? একদিকে গেরুয়া ঘেঁষা চিত্রনাট্যে মুখ, অন্যদিকে সবুজ শিবিরের ডাকেও সাড়া, এতে করে ‘অরাজনৈতিক শিল্পী’ হওয়ার দাবির ভিতটাই নড়বড়ে হয়ে যায়। যাঁরা সৌরভকে ভালোবাসতেন তাঁর স্পষ্টবক্তা মানসিকতার জন্য, তাঁরাই আজ বিভ্রান্ত। একদিকে একটা বড় অংশ এই সিনেমাকে প্রত্যাখ্যান করছে, তখন সেই ছবির অংশ হয়ে সৌরভ জানাচ্ছেন, তিনি ছবির পুরো চিত্রনাট্য জানেন না, শুধু নিজের চরিত্র নিয়েই ভাবেন। আবার রাজনীতিতে থেকেও কোনও দায় অনুভব করেন না।

Rimi Datta

রিমি দত্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর। কপি রাইটার হিসেবে সাংবাদিকতা পেশায় চার বছরের অভিজ্ঞতা।